ঢাকা, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
সাত কলেজ সংকট নিয়ে ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি
আসাদুজ্জামান
রিপোর্টার

ঢাকার সাতটি প্রধান সরকারি কলেজ একীভূত করে সরকারের পরিকল্পিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘হাইব্রিড কাঠামো’ বা অপ্রচলিত শিক্ষাকাঠামোর পরীক্ষামূলক মডেল হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। তারা জোর দিয়ে বলছেন, দেশের প্রাচীনতম শিক্ষাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস, স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য সব পরিস্থিতিতেই রক্ষা করতে হবে।
ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই নিয়ে সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে তাদের দেওয়া সময়সীমা চার দিন। সময়সীমা শেষ হলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপরও যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আজ রোববার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অবস্থান প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী।
২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাতটি সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হঠাৎ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবারও সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেওয়া হলেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বর্তমানে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
সরকারি সাত কলেজের মধ্যে রয়েছে—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এখন এই সব কলেজকে একীভূত করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। বিষয়সমূহও হ্রাস করা হবে। নতুন প্রস্তাবিত কাঠামোকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ভিন্ন অবস্থান নেন এবং আন্দোলনে নেমেছেন।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ১৮৫ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ খসড়া অধ্যাদেশ সকল অংশগ্রহণকারীকে হতাশ করেছে। স্বার্থনির্ভর এই খসড়া অধ্যাদেশ শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সেগুলো হলো:
১. যেকোনো মূল্যে দেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে;২. কলেজের অবকাঠামোসহ এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে লিখে দেওয়া যাবে না;৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্যক্তিস্বার্থে ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা-সংকোচনমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না;৪. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ফেডারেল বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণে একটি নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে ঢাকা কলেজসহ সাতটি সরকারি কলেজ স্বমহিমায় স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে;৫. উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। তাদের ‘নিজভূমে পরবাসী’ বানানোর ষড়যন্ত্র পরিহার করতে হবে;৬. উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করা, যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সেশনজট মুক্ত করতে হবে;৭. শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যৌক্তিক করার জন্য দ্রুত শিক্ষকসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভাগপ্রতি ২০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বা পদায়ন করতে হবে। এ ছাড়া নতুন নতুন চাহিদাসম্পন্ন বিভাগ খুলতে হবে;৮. শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মেধাবৃত্তি, আবাসন–সুবিধা বৃদ্ধি, খাবারে ভর্তুকি ও শিক্ষাঋণ দিতে হবে। তাঁদের খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান করতে হবে;৯. শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের আলোকে টেকসই ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে; এবং১০. ঐতিহ্যবাহী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হাইব্রিড বা কোনো অপ্রচলিত শিক্ষাকাঠামোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণে পরিণত করা যাবে না। কোনো অবস্থায় সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ বা সীমিত করা যাবে না।
লিখিত বক্তব্যে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের ঐতিহ্য রক্ষায় দেশের সব রাজনৈতিক দল ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সহযোগিতা কামনা করা হয়। ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিও ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য হস্তক্ষেপের বিষয়টি মেনে নেবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন প্রাক্তন ছাত্ররা।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর সরফত আলী বলেন, ১৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এরপরও কোনো সমাধান না হলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশিদ হারুন, সাবেক জিএস জাকির হোসেন, সাবেক জিএস এস এ এইচ এম জাভেদসহ আরও অন্যান্য প্রাক্তন ছাত্ররা।
কেএমএ
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- বাংলাদেশে বনাম হংকং, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- আজ বাংলাদেশ বনাম হংকং ফুটবল ম্যাচ: কখন, কোথায় ও কিভাবে লাইভ দেখবেন
- বাংলাদেশে বনাম আফগানিস্তান,খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের যুগান্তকারী ঘোষণা
- বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল শেয়ারবাজারের খেতাব পেল বাংলাদেশ!
- ডুবছে ওষুধের দুই কোম্পানি, বিনিয়োকারীদের কপালে চিন্তার ভাজ
- ঢাবি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে জাপান, আবেদন করবেন যেভাবে
- বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- শেয়ারবাজারের কোম্পানিতে কারসাজির গন্ধ! তদন্তে নেমেছে বিএসইসি
- উৎপাদন বন্ধ চার কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সতর্কতা জারি
- শেয়ারবাজারে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার নতুন তদন্তে বিএসইসি
- মশিউর সিকিউরিটিজের গ্রাহকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা