ঢাকা, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০৯ ২১:২০:৫০

পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন

মোবারক হোসেন: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক বড় ধরনের রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার সূচনা হতে যাচ্ছে। দেশের পাঁচটি আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

কেন একীভূতকরণ প্রয়োজন হলো

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংকগুলো আর্থিক সংকটে জর্জরিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তারল্য সংকট, শ্রেণিকৃত ঋণের পাহাড়, প্রভিশন ঘাটতি এবং মূলধন ঘাটতি—সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলো কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছেছে। একাধিকবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

ফলে সরকার ‘রেজল্যুশন পরিকল্পনা ২০২৫’ নামে নতুন কাঠামো অনুমোদন করেছে, যার আওতায় এই ৫ ব্যাংকের সম্পদ ও দায় একত্রিত করে একটি নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে।

নতুন ব্যাংকের মূলধন কাঠামো ও মালিকানা পরিকল্পনা

নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা, এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে, যার অর্ধেক নগদ ও বাকি অর্ধেক সুকুক বন্ডের মাধ্যমে।

অন্যদিকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ‘বেইল-ইন’ পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আমানত মূলধনে রূপান্তর করা হবে। তবে সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে, প্রয়োজনে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।

প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় পরিচালিত হবে, পরে ধাপে ধাপে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে।

আন্তর্জাতিক পরামর্শক ও মূল্যায়ন ফলাফল

বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কেপিএমজি (শ্রীলঙ্কা) ও আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (শ্রীলঙ্কা) ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায়ের গুণগত মূল্যায়ন সম্পন্ন করে। তাদের প্রতিবেদনে উঠে আসে—ব্যাংকগুলোতে অসংগঠিত পরিচালনা, অস্বচ্ছ ঋণ বিতরণ, দুর্বল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ভয়াবহ মূলধন ঘাটতি বিদ্যমান।এই বাস্তবতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে নতুন ইসলামি ব্যাংক গঠনের সুপারিশ করে।

শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের পরিণতি

রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী, একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন না, কারণ তাদের নিট সম্পদ ঋণাত্মক।

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর এই দুরবস্থার জন্য পরিচালনা পর্ষদ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অপরাধে জড়িত ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৫ ব্যাংকের আর্থিক চিত্র ভয়াবহ

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী:

• ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি – অভিহিত মূল্য ১০ টাকা, বাজার মূল্য ২.২০ টাকা, এনএভি -৪৩৮.৮১ টাকা

• গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি – বাজার মূল্য ১.৬০ টাকা, এনএভি -১১৭.৭২ টাকা

• ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি – বাজার মূল্য ১.৭০ টাকা, এনএভি -২২৪.৯৭ টাকা

• এক্সিম ব্যাংক পিএলসি – বাজার মূল্য ৩.৪০ টাকা, এনএভি -৭৫.৭৪ টাকা

• সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি – বাজার মূল্য ৩.৭০ টাকা, এনএভি -২১৩.৫১ টাকা

সবগুলো ব্যাংকের শেয়ারই এখন ঋণাত্মক নেট অ্যাসেট ভ্যালুতে, অর্থাৎ মালিকদের মূলধন পুরোপুরি ক্ষয়প্রাপ্ত।

আর্থিক স্থিতিশীলতার নতুন আশা

সরকার মনে করছে, এই একীভূতকরণ ও নতুন ব্যাংক গঠনের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট নিরসন হবে। পাশাপাশি আর্থিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত