ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

বাংলাদেশের শেয়ার নিষ্পত্তিতে সফটওয়্যার দিতে আগ্রহী পাকিস্তানের ইনফোটেক

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০৯ ০০:০৩:৪৯

বাংলাদেশের শেয়ার নিষ্পত্তিতে সফটওয়্যার দিতে আগ্রহী পাকিস্তানের ইনফোটেক

হাসান মাহমুদ ফারাবী: বাংলাদেশের শেয়ার নিষ্পত্তি কোম্পানি সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল)-এ সফটওয়্যার সেবা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইনফোটেক গ্রুপ। দক্ষিণ এশিয়ার শেয়ারবাজারের অবকাঠামো খাতে নিজেদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি এই আগ্রহ জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) ঢাকার হোটেল শেরাটনে আয়োজিত “টার্বো চার্জিং সাউথ এশিয়ান ক্যাপিটাল মার্কেটস – ঢাকা চ্যাপ্টার” শীর্ষক অনুষ্ঠানে ইনফোটেক এই ইচ্ছা প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তা ও বাজারসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ইনফোটেক সিসিবিএলকে সফটওয়্যার সেবা দিতে চায়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসন্ন টেন্ডারে তাদের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করবে।

ইনফোটেক বর্তমানে ঘানা, ইথিওপিয়া, পশ্চিম আফ্রিকান মুদ্রা ইউনিয়ন, পূর্ব আফ্রিকান কমিউনিটি, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়াসহ একাধিক দেশে আর্থিক প্রযুক্তি সেবা দিচ্ছে। অনুষ্ঠানে তারা তাদের তিন দশকের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা তুলে ধরে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী নাসির আহমদ আখতার বলেন, “ইনফোটেক দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক খাতে স্বচ্ছ ও টেকসই অবকাঠামো গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি সমাধান দিতে চাই, যা বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াবে।”

ইনফোটেকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হারিস নাসির অনুষ্ঠানে “ইনফিনিয়েম ট্রেডিং অ্যান্ড পোস্ট-ট্রেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার” নামে নতুন সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম উপস্থাপন করেন, যা ক্লাউডভিত্তিক ও আন্তঃসংযোগযোগ্য সিস্টেমের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ, ক্লিয়ারিং হাউস ও ডিপোজিটরিগুলো আধুনিকায়নের লক্ষ্য নিয়ে তৈরি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকার প্রযুক্তিনির্ভর ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত মূলধনবাজার গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে।

পাকিস্তানের সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ইশরাত হুসেইন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বাজার অবকাঠামোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ডিজিটাল ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, পাকিস্তানে এসব ব্যবস্থা চালুর পর স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, “এক্সচেঞ্জ, ক্লিয়ারিং হাউস, ডিপোজিটরি ও ব্রোকারদের মধ্যে ডিজিটাল সংযোগ বিনিয়োগকারীর আস্থা বহুগুণে বাড়াবে।”

ইশরাত হুসেইন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক (MoU)-কেও ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। তার মতে, এটি প্রযুক্তি ও নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করবে।

বাংলাদেশের শেয়ার নিষ্পত্তি অবকাঠামো এখনো গঠনপ্রক্রিয়ায়। ২০১৯ সালে ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এবং ১২টি ব্যাংক মিলে সিসিবিএল গঠন করে। এতে ডিএসই’র মালিকানা ৪৫ শতাংশ, সিএসই’র ২০ শতাংশ, সিডিবিএল’র ২০ শতাংশ এবং ১২টি ব্যাংকের যৌথ মালিকানা ১৫ শতাংশ।

বর্তমানে ডিএসই ও সিএসই নাসডাক সফটওয়্যার ব্যবহার করে শেয়ার নিষ্পত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

২০২২ সালের মার্চে সিসিবিএল সফটওয়্যার ও ডেটা সেন্টার স্থাপনে টেন্ডার আহ্বান করে। চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) নির্বাচিত হয় এবং ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের লেটার অব ইন্টেন্ট (এলওআই) জারি করা হয়। টিসিএস এক সপ্তাহ পরই এলওআই গ্রহণ করে।

তবে নতুন ডিএসই বোর্ড মূল্যসংক্রান্ত উদ্বেগের কথা বলে এলওআই বাতিল করতে সিসিবিএলকে বাধ্য করে এবং নতুন টেন্ডার আহ্বানের ঘোষণা দেয়।

ডিএসই ও সিসিবিএলের এই বিরোধ নজরে রাখছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মধ্যস্থতার পর বিএসইসি নির্দেশ দিয়েছে, ভবিষ্যতে সিসিবিএলের সব কার্যক্রমে প্রধান শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় নিশ্চিত হয়।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত