ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি টাকার গোপন ঋণ!

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ৩০ ১২:৩২:৪৭

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি টাকার গোপন ঋণ!

হাসান মাহমুদ ফারাবী: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক প্রভিশন রাখার তথ্যও আড়াল করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে এই বিশাল জালিয়াতি বের হয়ে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে প্রধান কার্যালয়সহ বড় শাখাগুলোর খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন যাচাই করা হয়। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে কয়েকটি শাখার অফসাইট প্রতিবেদন যাচাই করে রিপোর্ট প্রস্তুত করে।

এ রিপোর্টে দেখা যায়, ব্যাংক ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণের তথ্য পাঠিয়েছে ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা, তবে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। এর মানে, খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার তথ্য আড়াল করা হয়েছে। একই সময় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রভিশন থাকা উচিত ছিল ৬ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা, কিন্তু ব্যাংক রাখে মাত্র ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা, ফলে প্রভিশন ঘাটতি ৫ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা আড়াল করা হয়েছে।

গত পাঁচ বছরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সর্বাধিক বেড়েছে। ২০২৩ সালে ঋণ ছিল ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা, ২০২২ সালে ৭৬৭ কোটি, ২০২১ সালে ৬৮১ কোটি, এবং ২০২০ সালে ৫৩৫ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ১৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের ৪৩৪ কোটি টাকা থেকে কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শাখার বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়েছে এবং এতদিন ব্যাংক এটি লুকিয়ে রেখেছিল। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঋণগুলো খেলাপি করার নির্দেশ দেয়। ব্যাংক প্রথমে এতে রাজি ছিল না, ফলে বার্ষিক প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে চূড়ান্ত করতে পারেনি।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি আরও বেড়েছে। মার্চ মাসের শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণ ৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৬ কোটি টাকা, আর মূলধন ঘাটতি জুনে ৭ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা হয়েছে।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত