ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক থেকে ওষুধ তৈরি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৭ ১৮:০৬:১৫

ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক থেকে ওষুধ তৈরি

ডুয়া ডেস্ক: বিজ্ঞানের এক অভিনব দৃষ্টান্তে প্লাস্টিক বর্জ্যকে ব্যথানাশক ওষুধে রূপান্তরের গবেষণা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের কেমিক্যাল বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন ওয়ালেস নেতৃত্বে গবেষকরা সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ইশেরিকিয়া কোলাইকে (ই. কোলাই) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে এমনভাবে পরিবর্তন করেছেন, যাতে এটি প্লাস্টিকজাত উপাদান হজম করে এবং তা থেকে প্রতিদিন ব্যবহৃত ব্যথানাশক ওষুধ উৎপাদন করতে পারে।

অধ্যাপক ওয়ালেস বলেন, “ই. কোলাইকে প্রথমে বেছে নেওয়ার কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরে বায়োটেকনোলজি গবেষণায় পরীক্ষিত একটি নির্ভরযোগ্য জীবাণু।” এর আগে এই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ভ্যানিলা ফ্লেভার এবং পয়ঃনালার চর্বিজমা থেকে পারফিউম তৈরির ক্ষেত্রে সফলতা দেখানো হয়েছে।

ই. কোলাই মূলত মানুষের অন্ত্রে থাকা একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া। যদিও কিছু স্ট্রেইন মানুষের জন্য হানিকর হতে পারে, তবে নিরাপদ অ-প্যাথোজেনিক স্ট্রেইন দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাগারে এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ব্যাকটেরিয়াকে আধুনিক জীববিজ্ঞানে জৈবিক কারখানা হিসেবে গণ্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, এর মাধ্যমে ইনসুলিন উৎপাদন করা হয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যক। এছাড়া জ্বালানি ও বিভিন্ন রাসায়নিক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়।

ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৮৫ সালে জার্মান শিশু চিকিৎসক থিওডর ইশেরিখ প্রথম এই ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করেন। ১৯৪০-এর দশকে ই. কোলাই-এর মাধ্যমে জেনেটিক রিকম্বিনেশন বা জেন বিনিময় আবিষ্কৃত হয়, যা জীববিজ্ঞানে বিপ্লব সৃষ্টি করে। ১৯৭০-এর দশকে এটি প্রথম জীব যা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা পরিবর্তিত হয় এবং ১৯৭৮ সালে প্রথম কৃত্রিম মানব ইনসুলিন তৈরি করা হয়। ১৯৯৭ সালে ই. কোলাই-এর পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক অ্যাডাম ফেইস্ট বলেন, “অন্যান্য জীবাণুর তুলনায় ই. কোলাই সহজ, টেকসই এবং বহুমুখী। এটি নানা ধরনের খাদ্য উপাদানে বৃদ্ধি পেতে পারে, সহজে সংরক্ষণযোগ্য এবং পুনরায় চাষ করা যায়।” জিনকো বায়োওয়ার্কস-এর সিনিয়র ডিরেক্টর সিনথিয়া কলিন্স বলেন, “উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন জীবাণু ব্যবহার করা সম্ভব হলেও ই. কোলাই এখনো কার্যকর বিকল্প, বিশেষ করে যদি উৎপাদিত বস্তুটি এর জন্য উপযুক্ত হয়। যদি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কিছু বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়, সেগুলোও ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে নিরাপদ করা যায়।”

এই উদ্ভাবন প্রমাণ করে, কীভাবে পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিককেও ভবিষ্যতে মূল্যবান ওষুধে রূপান্তর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ই. কোলাই একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত