ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২

'ট্রাম্পের কোনোভাবেই শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই'

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৬ ০১:৪৯:৩৮

'ট্রাম্পের কোনোভাবেই শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রত্যাশা করলেও, এবার তা তার ভাগ্যে জুটছে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করছেন, যা পুরস্কার প্রদানকারী কমিটির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি তার তীব্র লবিংও উলটো ফল বয়ে আনতে পারে, কারণ নোবেল কমিটি বাইরের চাপ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পছন্দ করে।

নোবেল কমিটির একজন সদস্য ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আগামী ১০ অক্টোবর নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা হতে চলেছে।

নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসবিদ আসলে স্ভেন বলেছেন, "তার কোনোভাবেই শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।" তিনি উল্লেখ করেন, গাজায় ইসরায়েলকে সমর্থন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টার মতো বিষয়গুলো ট্রাম্পের বিপক্ষে গেছে।

আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুযায়ী, এই পুরস্কার তাকে দেওয়া উচিত যিনি জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি বা সেরা কাজ করেছেন। অসলো শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিনা গ্রাগার বলেন, ট্রাম্পের কাজ এই সংজ্ঞার পরিপন্থী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন এবং পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। এগুলো শান্তিপূর্ণ প্রেসিডেন্টের পরিচয় নয় বলে মনে করেন তিনি।

পাঁচ সদস্যের নোবেল কমিটি এবার এমন কোনও মানবিক সংস্থাকে স্বীকৃতি দিতে পারে, যারা জটিল পরিবেশে কাজ করছে। ট্রাম্পের বিদেশি সাহায্য কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্তও এর পেছনে কিছুটা দায়ী। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (UNICEF), রেড ক্রস, ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স, কিংবা সুদানের ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস–এর মতো স্থানীয় তৃণমূল সংগঠন পুরস্কার পেতে পারে।

এছাড়াও সাংবাদিকদের গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে, বিশেষ করে গত বছর গাজায় রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এই পুরস্কারের যোগ্য হতে পারে। আফ্রিকার সংঘাত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা স্থানীয় মধ্যস্থতাকারী দলগুলোও বিবেচনায় আসতে পারে, যেমন মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিকের শান্তি কমিটি বা দারফুরের এল ফাশারের এল্ডার্স অ্যান্ড মেডিয়েশন কমিটি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান কারিম হাগগাগ বলেছেন, "এর যেকোনো একটি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।"

ট্রাম্পের মতো তীব্রভাবে শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জন্য লবিং অতীতে কেউ করেনি। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহুবার এই পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। তবে লবিং সাধারণত উলটো ফল দেয় বলে জানিয়েছেন বর্তমান নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির উপপ্রধান আসলে তোজে। তিনি বলেন, "এ ধরনের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা ইতিবাচকের চেয়ে বরং নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ আমরা কমিটিতে এ বিষয়ে আলোচনা করি। কিছু প্রার্থী জোর চাপ দেয়, আর সেটা আমাদের ভালো লাগে না।"

বর্তমান কমিটির প্রধান ইয়োরগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস জানান, এ ধরনের মনোযোগ তাদের কাজে প্রভাব ফেলে না। তিনি বলেন, "সব রাজনীতিবিদই নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে চান। আমরা আশা করি, শান্তি পুরস্কারের মূল আদর্শগুলো সব রাজনৈতিক নেতাদের জন্যই অনুসরণের বিষয় হওয়া উচিত।"

তবে অতীতেও বহু চমকপ্রদ প্রার্থী নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার মাত্র আট মাস পর নোবেল পেয়েছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারও এই পুরস্কার পান। নরওয়ের সাবেক নোবেল কমিটির সদস্য হেনরিক সিসে বলেছেন, "নির্দয় রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও, স্বৈরশাসক হয়েও, অথবা খারাপ কাজ করার পরেও অনেক সময় মানুষ শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।" তবে এক্ষেত্রে তারা ভুলগুলো বুঝতে পেরে সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ বর্ণবাদী শাসক এফ.ডব্লিউ. ডি ক্লার্কের নাম উল্লেখ করা হয়।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত