ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২

বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহারে অনিয়ম, তদন্তের মুখে দুই প্রতিষ্ঠান

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৬ ১২:৫৩:১৩

বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহারে অনিয়ম, তদন্তের মুখে দুই প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের দুই সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি—ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং ক্যাপিটেক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড—এর বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ, বিদেশে পাচার, বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা। এ কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কমিশন ১৮টি শর্ত সাপেক্ষে তিন সদস্যের দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আদেশ অনুযায়ী, কমিটিগুলোকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে আদেশ দুটি জারি হয় এবং কোম্পানি দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

ভ্যানগার্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিতে আছেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আমদাদুল হক, সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল্লাহ খান ও মো. আশরাফুল হাসান। ক্যাপিটেকের বিরুদ্ধে গঠিত কমিটিতে রয়েছেন যুগ্ম পরিচালক সুলতানা পারভিন, সহকারী পরিচালক মো. শাকিল আহমেদ ও সহকারী পরিচালক মো. হাসান। বর্তমানে ভ্যানগার্ড পরিচালনা করছেন ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী এবং ক্যাপিটেক পরিচালনা করছেন এম. মাহফুজুর রহমান।

ভ্যানগার্ডের অধীনে রয়েছে দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড—ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান এবং ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ড। অন্যদিকে, ক্যাপিটেকের অধীনে আছে ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড। এসব ফান্ডের নগদ সম্পদ, সিকিউরিটিজ বিক্রির অর্থ, আয়ের প্রতিবেদন এবং তহবিল ব্যবস্থাপনায় কোনো অনিয়ম বা কারসাজি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সব লেনদেন, ব্যাংক হিসাব ও বেনিফিশিয়ারি ওনার (বি/ও) অ্যাকাউন্টও যাচাই করা হবে।

তদন্তে ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ বা পাচারের ঘটনা, ভুয়া আয় প্রদর্শন, বিধিমালা লঙ্ঘন করে অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, এনএভি পতনের পেছনে অব্যবস্থাপনার দায়, ব্যবস্থাপনা ফি, ট্রাস্টি ফি, কাস্টডিয়ান ফি, ব্রোকারেজ কমিশনসহ খরচ বৈধভাবে হয়েছে কি না—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া বোর্ড মিটিং, এজিএম, আইনগত নথি এবং সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ান ও নিরীক্ষকদের ভূমিকা যাচাই করবে তদন্ত কমিটি।

বিএসইসির ৯৬৪তম কমিশন সভায় গত ২২ জুলাই সিদ্ধান্ত হয়, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান থেকে ২০১৭ সালে এএফসি হেলথ লিমিটেডে করা ৪ কোটি টাকার বিনিয়োগে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। এতে ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় ভ্যানগার্ডকে ৯ কোটি টাকা ফান্ডে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে ফেরত না দিতে পারলে ১০ কোটি টাকা জরিমানা আরোপ হবে।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এই তদন্ত আদেশ দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও জবাবদিহিহীনতা উন্মোচনে সহায়ক হবে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বড় পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত