ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২
ডেঙ্গুর পাশাপাশি চার ভাইরাসের প্রভাব, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ডুয়া ডেস্ক: বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার ঘাটতি, দেরিতে চিকিৎসা এবং জটিল রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে রোগীর, আর জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি পরিণত হয়েছে এক বড় হুমকিতে।
এদিকে সোমবার নতুন করে আরও পাঁচজনের মৃত্যু যোগ হওয়ায় এ বছর এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৫ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিম্নরূপ— জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে শূন্য, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯ এবং সেপ্টেম্বরে (১৪ তারিখ পর্যন্ত) ৩৩ জন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে মৃত্যু ২১ জন করে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মারা গেছেন ১৭ জন।
অন্যদিকে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নতুন করে ৬৩৬ জন রোগী। ফলে এ বছর এখন পর্যন্ত সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৫২৭ জনে।
মৃত্যুহার বাড়ার কারণ কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এইচ এম নাজমুল আহসানের মতে, মৃত্যুহার বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে— দেরিতে হাসপাতালে আসা, রোগ নিয়ে মানুষের উদ্বেগ কমে যাওয়া, আগের মতো গুরুত্ব না দেওয়া, একসঙ্গে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং ঢাকায় রোগী রেফার করতে দেরি করা।
তিনি বলেন, এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও মৃত্যুহার বেড়েছে। কারণ, অন্যান্য ভাইরাসজনিত সংক্রমণে মানুষ ডেঙ্গুকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বর্তমানে দেশে ডেঙ্গুর পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা, চিকুনগুনিয়া ও কোভিড-১৯ ছড়াচ্ছে।
দেরিতে রেফার ও জটিলতা
ডা. নাজমুল আহসান জানান, অনেক রোগী গুরুতর পেটব্যথা, শ্বাসকষ্ট, রক্তক্ষরণ, তীব্র অবসাদ, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা দ্রুত প্লাটিলেট হ্রাসের মতো বিপজ্জনক লক্ষণগুলোকে অবহেলা করেন। ফলে হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হলে তাদের অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, বিশেষ করে বয়স্ক, একাধিক রোগে আক্রান্ত ও সন্তানসম্ভবা নারীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। কারণ, ডেঙ্গুর ভিন্ন সেরোটাইপে পুনঃসংক্রমণ হলে জটিলতা মারাত্মক রূপ নিতে পারে, যদি চিকিৎসায় বিলম্ব ঘটে।
ঢাকা দক্ষিণে সর্বাধিক মৃত্যু হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বাইরে থেকে সংকটাপন্ন রোগীদের রেফার করে ঢাকায় আনা হয়। এতে সময় নষ্ট হয় এবং অনেক রোগী শক অবস্থায় পৌঁছান। তিনি পরামর্শ দেন, জেলা পর্যায়ে জাতীয় ডেঙ্গু চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুসারে চিকিৎসা দেওয়ার, আর কেবল গুরুতর রোগীদেরই ঢাকায় পাঠানোর।
প্রতিরোধে জনসচেতনতার ওপর জোর
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন বলেন, মৃত্যুহার কমাতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসা জেলা পর্যায়েই নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি সিটি করপোরেশনের দেওয়া বিনামূল্যের ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ গ্রহণে মানুষকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি রক্ত সংগ্রহকেন্দ্র বাড়ানো ও মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের সুপারিশ করেন, যাতে বড় হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমে।
এছাড়া সারা বছরব্যাপী স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি চালিয়ে মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণের ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন।
এমজে
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- সরকারের সিদ্ধান্তে ডুবছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন?
- ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড কার্যকারিতায় বিএসইসির নতুন উদ্যোগ
- শেয়ার কারসাজিতে ৫ বিনিয়োগকারীকে ১৩ কোটি টাকা জরিমানা
- শেয়ারবাজারে প্রতারণা ঠেকাতে মাঠে নামছে গোয়েন্দা সংস্থা
- শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক মুনাফা চান? জেনে নিন ৫ মন্ত্র
- আরএসআই বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত পাঁচ শেয়ারে
- কৃত্রিম চাপে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, সহসা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা
- একাদশে ভর্তি: চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ
- এক কোম্পারি অস্থিরতায় শেয়ারবাজারে তোলপাড়
- মালিকানায় পরিবর্তন আসছে ইয়াকিন পলিমারের
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ইস্টার্ন হাউজিং
- এক শেয়ারের জোরেই সবুজে ফিরল শেয়ারবাজার
- শেয়ারবাজারে প্রসারিত হচ্ছে টেকসই বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত
- ধস কাটিয়ে অবশেষে শেয়ারবাজারে উত্থানের স্রোত
- রেকর্ড ডেটে শেয়ার লেনদেন চালুর পরিকল্পনা ডিএসইর