ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

সার আমদানিতে অনিয়মের অভিযোগ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ২২:৩০:০৪

সার আমদানিতে অনিয়মের অভিযোগ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে যখন সারের সংকট চলছে, ঠিক সেই সময় সার আমদানিতে এক ব্যক্তির একাধিক কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অসাধু কার্যক্রমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের দাবি করা হলেও, মন্ত্রণালয় এটিকে 'উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারি অর্থ লোপাটের অভিনব উদ্যোগ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় বেসরকারি মাধ্যমে সার আমদানি করতে কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে দরপত্র নীতিমালা উপেক্ষা করে একক ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে। এতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পায়নি এবং 'নেগোসিয়েশন'-এর মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, যা সার আমদানি সংক্রান্ত পরিপত্রের পরিপন্থী।

তবে কৃষি মন্ত্রণালয় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো 'ভিত্তিহীন, মনগড়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অসত্য তথ্য সম্বলিত'। তাদের দাবি, সরকার যে প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দিয়েছে, তাতে প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে টনপ্রতি ২০-১৫০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে। মন্ত্রণালয় এই অভিযোগকে 'ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার' হিসেবে দেখছে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, একই সারের জন্য কেবল সর্বনিম্ন দরে সার সরবরাহে সম্মতি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই ক্রয়াদেশ দেওয়া হবে। এর ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে এবং আমদানিকারকদের অসম লাভের পথ সংকুচিত হয়েছে।

তবে সূত্র মতে, গত ২৪ জুলাই সাড়ে ৯ লাখ টন সার আমদানির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলে, ৫ লাখ ১৫ হাজার টন টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি আমদানির কার্যাদেশ মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক ব্যক্তির (আমিনুর রশিদ খান) মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান এবং তার এক আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠানের নামেই ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই কার্যাদেশে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যেখানে দুটি দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দর অনুমোদন করে কোন দেশ থেকে কতটুকু আমদানি করা হবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি, যা অন্যান্য ১৮ জন আমদানিকারককে দেওয়া হয়নি।

বিশেষ করে, দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের নামে ৩০ হাজার টন টিএসপি আমদানির কার্যাদেশে মরক্কো ও লেবাননের জন্য ভিন্ন দর থাকলেও পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। একইভাবে বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ৪০ হাজার টন ডিএপি আমদানির ক্ষেত্রে মিশর ও চীনের জন্য ভিন্ন দর অনুমোদন করা হয়েছে, যেখানে এই ধরনের কার্যাদেশ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানা গেছে।

আমদানিকারকদের আশঙ্কা, এই বিপুল পরিমাণ সার আমদানি সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায়, নির্দিষ্ট সময়ে সার সরবরাহ না হলে আসন্ন পিক সিজনে সারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলের একাধিক কর্মকর্তা এই 'সিন্ডিকেট' তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন।

উল্লেখ্য, বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর আগেও ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সার আত্মসাতের অভিযোগে বিসিআইসির তদন্তে অভিযুক্ত হয়েছিল। মন্ত্রণালয় তাদের ব্যাখায় 'নির্দিষ্ট সারের ক্ষেত্রে একটি দেশের বেলায় সকল আমদানিকারককে কেবল একটি নির্দিষ্ট দরেই সার সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়েছে' দাবি করলেও, বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, দেশ ট্রেডিং করপোরেশন এবং এনআরকে গ্লোবালের কার্যাদেশে এই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগউঠেছে।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

জাকসুর নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে ডাকসুর শুভেচ্ছা

জাকসুর নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে ডাকসুর শুভেচ্ছা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)-এর নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর,... বিস্তারিত