ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২
হিট এক্সহশন থেকে হিট স্ট্রোক: কীভাবে চিনবেন, কী করবেন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার দুপুর মানেই অসহনীয় ভ্যাপসা গরম। আর্দ্রতার চাপা যন্ত্রণা, মাথার ওপর প্রখর রোদ, বাতাসহীন গলি আর চারপাশের ঘোলাটে পরিবেশ মিলিয়ে বাইরে বের হওয়া যেন প্রতিদিনের যুদ্ধ। অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে দিনমজুর—সবাই একই কষ্টে ভোগেন। কিন্তু এই গরম শুধু অস্বস্তির কারণ নয়, বরং শরীরের জন্য বিপজ্জনক ঝুঁকি বয়ে আনে। পানিশূন্যতা, হিট এক্সহশন এমনকি প্রাণঘাতী হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে সবার জন্যই। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী, প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষের ঝুঁকি অনেক বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, শরীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ঘাম ঝরায়। কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকলে ঘাম দ্রুত শুকোয় না, ফলে শরীর ঠাণ্ডা হতে পারে না। এতে শরীরে অতিরিক্ত তাপ জমে যায় এবং দেখা দেয় হিট এক্সহশনের লক্ষণ—অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশিতে খিঁচুনি এবং দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি হিট স্ট্রোকে রূপ নিতে পারে, যা মস্তিষ্ক, কিডনি ও লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ বা ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া হিট স্ট্রোকের গুরুতর লক্ষণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময় প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. নিখাত শাহলা আফসার কিছু জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন—
সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
তৃষ্ণা না পেলেও নিয়মিত পানি পান করুন। চিকিৎসকের পরামর্শে যারা পানি নিয়ন্ত্রণে আছেন, তারা নির্ধারিত পরিমাণেই পানি খাবেন।
হালকা, ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরুন। বাইরে গেলে ছাতা, টুপি, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন এবং আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন।
প্রচণ্ড গরমে ভারী কাজ বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।
বাইরে গেলে সম্ভব হলে ছায়ায় থাকুন এবং সঙ্গে পানি রাখুন।
অ্যালকোহল, চা, কফি ও সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন।
অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত বা বাসি খাবার খাবেন না।
ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন বা পা ভিজিয়ে রাখুন।
শিশু বা পোষা প্রাণীকে কখনোই গরম গাড়িতে রেখে যাবেন না।
অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
যদি কারও হিট এক্সহশনের উপসর্গ দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে, অপ্রয়োজনীয় পোশাক খুলে দিতে হবে এবং ঠাণ্ডা পানি বা রিহাইড্রেশন ড্রিঙ্ক খাওয়াতে হবে। শরীরে ভেজা কাপড় দিয়ে ঠাণ্ডা সেঁক দেওয়া বা বরফপ্যাক ব্যবহার করাও কার্যকর। কিন্তু হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই জরুরি।
শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য এই গরম আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ইউনিসেফের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের সুরক্ষায় জাতীয় নির্দেশিকা চালু করেছে। সেখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে চার ধাপের সচেতনতায়—ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো, লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করা, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং গুরুতর হলে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া।
এছাড়া রান্নাঘরে কাজ করার সময় অতিরিক্ত তাপের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কখনোই শিশু বা পোষা প্রাণীকে গরম গাড়ির ভেতরে ফেলে রাখা উচিত নয়।
ভ্যাপসা গরম থামানো সম্ভব নয়, তবে সচেতনতা বাড়ালে এর ক্ষতি কমানো যায়। পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা পোশাক, সঠিক সময়ে বাইরে যাওয়া এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা নিলেই গরমের কষ্ট অনেকটাই সহনীয় হয়ে উঠবে।
ইএইচপি
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ৪০ বছরের ইতিহাসে ডিভিডেন্ডে নজির ভাঙল এপেক্স ট্যানারি
- ঘোষণা দিয়েও শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেয়নি ১৭ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণায় রেকর্ড ভাঙ্গল লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স!
- শেয়ারবাজারে হাহাকার, ৮ দিনে ৪২ হাজার কোটি টাকা গায়েব!
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে মুন্নু এগ্রো
- একদিনে 'এ' ক্যাটাগরিতে ফিরল দুই কোম্পানি
- বস্ত্র খাতের ৮ কোম্পানিতে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
- পতন তান্ডবে শেয়ারবাজারে ছোটদের কফিনেও বড় পেরেক!
- লাফার্জ হোলসিমের উচ্চ মুনাফার 'অ্যাগ্রিগেটস' ব্যবসা
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান বিএসইসির
- শেয়ারবাজারে সচেতনতা বাড়াতে এবার যুক্ত হচ্ছে মাঠ প্রশাসন
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ১৭ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে বিএসআরএম লিমিটেড
- মার্জিন ঋণ আতঙ্কে হঠাৎ ধস নামলো শেয়ারবাজারে!
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানি