ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরাতে সরকারের উদ্যোগে আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ০৭:০৩:২৭

শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরাতে সরকারের উদ্যোগে আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা

হাসান মাহমুদ ফারাবী: বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং শেয়ারবাজারকে প্রাণবন্ত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টের মধ্যে ওঠানামা করা শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) নতুন করে মূলধন সরবরাহ করা হচ্ছে।

আর্থিক প্রণোদনা ও মূলধন যোগান

শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার আইসিবিকে ২ হাজার কোটি টাকা দেবে। এর পাশাপাশি, ২০১০ সালের বাজার পতনের পর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তার জন্য গঠিত ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলটি আরও পাঁচ বছরের জন্য, অর্থাৎ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই তহবিলটি প্রথম ধাপে ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল এবং পরে এটি ঘূর্ণায়মান ভিত্তিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মানের শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি

শেয়ারবাজারে ভালো মানের শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে সরকারি সংস্থাগুলো দশটি কোম্পানিকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানি হলো: ইউনিভার, নেসলে, নোভারটিস, সিনজেনটা, সিনোভিয়া (সাবেক সানোফি বাংলাদেশ) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি। সরকার এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে তাদের মালিকানার অন্তত পাঁচ শতাংশ শেয়ার জনগণের কাছে অফলোড করার পরিকল্পনা করছে।

এছাড়াও, চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে: পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন।

দীর্ঘদিন ধরে ভালো মানের শেয়ারের সংকটে ভোগা সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সরকারের এই উদ্যোগে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমানে ৩৬০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, যা তিন বছর আগে ছিল ৩৫০টি। গত ১৩ বছরে ১২৭টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও-এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশিই খারাপ পারফর্মিং কোম্পানি যারা খুবই কম বা কোনো ডিভিডেন্ড দেয় না।

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা

বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি শেয়ারবাজারের জন্য একটি 'গেম চেঞ্জার' হতে পারে। এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তোফায়েল রতন বলেন, "যখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে, তখন এটি শেয়ারবাজারে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিনিয়োগকারীরা এই উচ্চ-পারফর্মিং কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।" তিনি গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির উদাহরণ টেনে বলেন, যদি আরও ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ার অফলোড করে, তবে একই ধরনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।

তবে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, “যদিও এটি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি, কোনো সরকারই তাদের বাজারে আনতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি। এবার দেশের প্রধান নির্বাহী এই তালিকাভুক্তির কথা বলেছেন, যা আমাকে আশাবাদী করছে।”

নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি আরও স্বচ্ছ ও ন্যায্য লেনদেনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে মার্জিন, মিউচুয়াল ফান্ড এবং পাবলিক ইস্যু সংক্রান্ত বিধিতে সংশোধনীর খসড়া তৈরি করছে। এগুলো যগোপযুগী করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)-এর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে ভালো কোম্পানি প্রবেশ না করায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ তেমন ছিল না, যার কারণে বাজার স্থিতিশীল ও টেকসই হতে পারেনি। উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত