ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

মাদকের ছোবলে তরুণ সমাজ, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ০৮:৩০:৩৩

মাদকের ছোবলে তরুণ সমাজ, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মাদকাসক্তি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এ আসক্তির প্রধান শিকার হচ্ছে কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা। আক্রান্তদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ইয়াবা-নির্ভর, যা মোট মাদকাসক্তদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। উদ্বেগজনকভাবে শিক্ষিত তরুণ, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরাও এর বাইরে নন। যদিও নারীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

২০১৭ সালের সরকারি জরিপ অনুযায়ী, দেশে অন্তত ৮৩ লাখ মানুষ মাদকে আসক্ত। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। এদের মধ্যে সর্বাধিক ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণরা। মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে তারা মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগছে, যা মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ জানান, মাদকাসক্তদের মধ্যে হঠাৎ কিডনি বিকল, নেফ্রাইটিস ও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তরুণদের মধ্যে এ সমস্যাই সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া তরুণ সমাজকে রক্ষা সম্ভব নয়।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর মতে, মাদক তরুণদের অকালমৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠছে। লিভার ও প্যানক্রিয়াসে ক্যানসারসহ ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের অনেকেই মারা যাচ্ছেন।

অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন মাদক গ্রহণের ফলে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আক্রান্তরা অনিদ্রায় ভোগেন, স্ট্রোক ও নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হন। এর ফলে অনেকে হাঁটার শক্তি হারান, শরীর অবশ হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। তরুণদের মৃত্যুহারও তাই বাড়ছে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামালের পর্যবেক্ষণ, মাদকাসক্ত কিশোর-তরুণদের মানবিক গুণাবলি দ্রুত হারিয়ে যায়, তারা একসময় দানবীয় আচরণ করে। যদিও সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন পেলে অনেকেই সুস্থ হতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ পরিবার তাদের চিকিৎসা করাতে পারে না বা করতে চায় না।

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এন হুদা বলেন, মাদকাসক্তরা স্থায়ীভাবে যৌন ক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়। তাদের জীবনযাপন হয় অস্বাস্থ্যকর ও অগোছালো, যা শারীরিক ক্ষতি আরও বাড়িয়ে তোলে।

দেশের সীমান্ত এলাকা—টেকনাফ, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ বিভিন্ন পথ দিয়ে অবাধে মাদক প্রবেশ করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুললেই এ বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকাসক্তদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা সর্বাধিক। মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই, ডাকাতি, খুনসহ যে কোনো ধরনের অপরাধ করতে তারা দ্বিধা করে না। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, মাদকাসক্ত একজন মানুষ হিসেবে তাদের মধ্যে সেই চেতনাবোধ থাকে না। মাদকাসক্তরা মা-বাবাকেও হত্যা করতে দ্বিধা করে না। সংবাদপত্রে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আহ্বান, সর্বনাশা মাদকের ছোবল থেকে এই তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে রাজনৈতিক দলসহ সব পেশার মানুষকে সমন্বিতভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত