ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২

বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরল সুপ্রিম কোর্টে

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০২ ২৩:৪২:০৮

বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরল সুপ্রিম কোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক: হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছেন যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ এবং রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের (আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ) একটি অন্যটির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না।

বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের সংশোধনী অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সংবিধান সাধারণ কোনো আইন নয়। সংবিধানের কোনো বিধানকে যখন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়, তখন পূর্ববর্তী বিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরুজ্জীবিত বা পুনর্বহাল হয়ে যায়। এই রায়ে বিদ্যমান ১১৬ অনুচ্ছেদের সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে তা বাতিল করা হয়েছে এবং আদি (বাহাত্তরের) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়েছে, যা ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন।

আদালত আরও বলেন, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন না করায় ২০১৭ সালে প্রণীত শৃঙ্খলাবিধি অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করা হলো। সুপ্রিম কোর্টের স্বতন্ত্র সচিবালয় নিয়ে আদালত বলেন, জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র সচিবালয় থাকলেও বিচার বিভাগের স্বতন্ত্র সচিবালয় এখনো হয়নি, যা সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। আদালত বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবনা অনুসারে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এই রায়ের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) এবং শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের হাতে ফিরে এলো। এখন থেকে বিচারকদের বদলি ও শৃঙ্খলা বিধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে আর রাষ্ট্রপতির কাছে ধরনা দিতে হবে না।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া, এবং ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম।

রায়ের পর রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এটিকে একটি ঐতিহাসিক রায় বলে অভিহিত করে বলেন, এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হলো। এখন থেকে বিচারকদের নির্ভয়ে রায় দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে এবং নির্বাহী কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ে রাতের অন্ধকারে বিচারকদের বদলির আর কোনো ভয় থাকবে না।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত