ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

ন্যাশনাল টি: শ্রমিকদের বেতন নেই, পরিচালকের সুবিধা দ্বিগুণ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০২ ০৬:৫৬:৩৮

ন্যাশনাল টি: শ্রমিকদের বেতন নেই, পরিচালকের সুবিধা দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা লঙ্ঘন করে রাইটস ইস্যুর তহবিল থেকে ২৯ কোটি টাকা খরচ করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)। একই সময়ে চা বাগানের শ্রমিকদের প্রায় ১৭ সপ্তাহের এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬ মাসের বেতন বকেয়া থাকলেও, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ নিজেদের সভা ফি দ্বিগুণ করেছে এবং চেয়ারম্যানকে স্থায়ী উচ্চ সম্মানী দিয়েছে।

কোম্পানিটি গত এক বছর ধরে কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিএসইসি এক চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল, সরকারের ৫১ শতাংশ শেয়ারহোল্ডিং নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাইটস ইস্যুর অর্থ খরচ করা যাবে না। তবে এই নির্দেশনার সরাসরি অবাধ্যতা করে চলতি বছরের জুলাইয়ে কোম্পানিটি গোপনে এই তহবিল থেকে ২৯ কোটি টাকা খরচ করেছে, যা ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাইটস ইস্যুর প্রসপেক্টাসে বলা হয়েছিল, এই তহবিল ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, কার্যনির্বাহী মূলধনের জোগান এবং চা বাগান ও কারখানার উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু কোম্পানিটি বলছে, সরকারের শেয়ারহোল্ডিং নিশ্চিত করতে ব্যাংকের প্রতিবেদন পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।

কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ তাদের পরিচালকদের সভা ফি ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করেছে, যা একইসঙ্গে নিজেদের গঠনতন্ত্র ও বিএসইসি'র নির্দেশনা—উভয়কেই লঙ্ঘন করে। কোম্পানির গঠনতন্ত্রের ১২৮ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) অনুমোদন ছাড়া সভা ফি বাড়ানো যাবে না। এছাড়া, বিএসইসি'র ২০২১ সালের ২২ মার্চের নির্দেশনা অনুযায়ী, 'জেড' ক্যাটাগরির কোনো কোম্পানির পরিচালক সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকার বেশি সভা ফি নিতে পারবেন না।

এর আগে পরিচালকরা প্রতি সভায় ৬ হাজার টাকা পেতেন, যা ১০ শতাংশ কর কাটার পর ৫ হাজার ৪০০ টাকা হতো। এখন কর কাটার পর তারা ১০ হাজার ৮০০ টাকা পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি, কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মামুন রশীদ মাসিক ৭৫ হাজার টাকা ভাতা নিচ্ছেন। একটি ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যায়, কর কাটার পর তাকে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি এই অর্থকে বিনোদন, যাতায়াত এবং আবাসিক টেলিফোন সুবিধার খরচ হিসেবে দেখিয়েছে। অভিযোগ ওঠার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ভাতা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে এই রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শেয়ারের দামের কারসাজি থেকে শুরু করে সব স্তরেই অনিয়ম এখন নিয়মিত ঘটনা। শ্রমিকদের প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে বেশি দেখিয়ে সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো এবং ইচ্ছাকৃত লোকসান দেখাতে সিন্ডিকেটের কাছে বাজারদরের চেয়ে কম দামে চা বিক্রি করার অভিযোগও উঠেছে।

পরিচালকরা যখন এই বাড়তি সুবিধা ভোগ করছেন, তখন শ্রমিকদের ১৭ সপ্তাহের, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬ মাসের বেতন বকেয়া। চা বাগানগুলোর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে ৬ মাস ধরে এবং কোম্পানির ব্যাংক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায়।

সমালোচকদের দাবি, পরিচালকরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোম্পানিকে এই করুণ দশায় ফেলেছেন, যাতে সরকারকে বোঝানো যায় যে বেসরকারি খাতে হস্তান্তরই একমাত্র সমাধান। অন্যদিকে, এসব বিষয় জানা সত্ত্বেও বিএসইসি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং অভিযোগ উঠেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা উল্টো চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের অনিয়মে সহায়তা করছে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত