ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেলা: ২৩ বছর ধরে বন্দি

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ আগস্ট ১৭ ১৫:৩৭:০৩
ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেলা: ২৩ বছর ধরে বন্দি

ফিলিস্তিনের অন্যতম জনপ্রিয় ও সম্মানিত রাজনৈতিক নেতা মারওয়ান বারগুতি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ২০০২ সালে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তিনি মুক্তভাবে দিনের আলো দেখেননি।

পরিবারের স্পর্শ থেকেও রয়েছেন বহু দূরে। চরম নির্যাতনের মধ্যেও ভেঙে পড়েননি এই নেতা। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে উঠেছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক এবং ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’ নামে পরিচিত এক জীবন্ত কিংবদন্তি।

সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কারাগারের সেলে দুর্বল দেহে বসে আছেন বারগুতি, আর তাকে হুমকি দিচ্ছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী। দীর্ঘ বন্দিত্ব ও নির্যাতনের পরও তার চেতনায় ছিটেফোঁটা ভাঙন দেখা যায়নি।

বারগুতি ১৯৫৯ সালে রামাল্লার কোবার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি ফাতাহ আন্দোলনে যোগ দেন এবং প্রথমবার ১৯৭৮ সালে গ্রেফতার হন। কারাগারে বসেই ইংরেজি ও হিব্রু ভাষা শেখেন, পড়াশোনায় মন দেন।

এরপর মুক্ত হয়ে বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৮৪ সালে বিয়ে করেন আইনজীবী ফাদওয়া ইব্রাহিমকে।

প্রথম ইন্তিফাদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন বারগুতি। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় তিনি ফাতাহর সশস্ত্র শাখা তানজিমের নেতৃত্ব দেন এবং ইসরায়েলের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় উঠে আসেন। ২০০৪ সালে ইসরায়েলি আদালত তাকে পাঁচটি হত্যার অভিযোগে পাঁচবারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়, যা তিনি বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

কারাগারে তিনি নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, তাকে লাঞ্ছিত করা হয় এবং শারীরিকভাবে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। কারাবন্দি থেকেও তিনি ফিলিস্তিনি আন্দোলনকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। তিনি গোপনে বই লিখেছেন, অনশন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন এবং লাখো মানুষের অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছেন।

একাধিক জরিপে দেখা গেছে, তিনি এখনও ফিলিস্তিনি রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। এমনকি মাহমুদ আব্বাসের উত্তরসূরি হিসেবে অনেকেই তাকেই এগিয়ে রাখেন। বিভিন্ন বিশ্লেষক মনে করেন, তার মুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করতে পারে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে।

আন্তর্জাতিক মহলেও তার অবস্থান স্বীকৃতি পেয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা দেশমন্ড টুটু ২০১৬ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেন।

বারগুতি এখনো কারাগারে বন্দি, কিন্তু তার মনোবল ভাঙেনি। তার অটল অবস্থান ও আত্মত্যাগ আজও ফিলিস্তিনিদের মুক্তির প্রতীক হয়ে রয়েছে। সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি, স্কাই নিউজ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত