ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

রাখাইন ইস্যুতে জাতিসংঘের জরুরি সতর্কবার্তা

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ আগস্ট ১৬ ১০:৪৭:১৬
রাখাইন ইস্যুতে জাতিসংঘের জরুরি সতর্কবার্তা

মিয়ানমারের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছে, জরুরি সহায়তা না মিললে পরিস্থিতি দ্রুতই ‘পূর্ণাঙ্গ বিপর্যয়ে’ রূপ নিতে পারে। সংস্থাটি বলছে, বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

খাদ্য সংকটে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন ২০১২ সালের দাঙ্গায় সর্বস্ব হারানো প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের অর্থনীতি ভেঙে পড়লেও রাখাইনের পরিস্থিতি সামরিক অবরোধের কারণে সবচেয়ে ভয়াবহ।

ক্ষুধা ও হতাশায় আত্মহত্যার ঘটনাও বাড়ছে। এপ্রিলে সিত্তে শহরের একটি আশ্রয় শিবিরে এক ব্যক্তি কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। জুনে খাদ্যাভাবে এক পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি এক বৃদ্ধ দম্পতিও একই কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

ডব্লিউএফপি জানায়, চলতি বছর তাদের বৈশ্বিক তহবিল গত বছরের তুলনায় ৬০% কমেছে। ফলে মিয়ানমারে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের মাত্র ২০%কে সাহায্য করা সম্ভব হচ্ছে। অথচ বছরের শুরু থেকেই রাখাইনে অভাবগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। তহবিল সংকটে মার্চ মাসে সংস্থাটিকে সেখানকার সহায়তা কার্যক্রমও কমাতে হয়।

২০২৩ সালে সামরিক সরকার আরাকান আর্মির অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে রাখাইনের সব বাণিজ্য ও পরিবহন রুট বন্ধ করে দেয়। ফলে সিত্তে শহরে পৌঁছানো যায় কেবল সমুদ্র বা আকাশপথে। কৃষকরা জমিতে চাষ করতে পারছেন না, রোহিঙ্গাদের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ফলে আয়-রোজগারের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

আশ্রয় শিবিরে থাকা এক বাসিন্দা বলেন, “বাইরে যাওয়া যায় না, কাজ নেই। নিত্যপণ্যের দাম পাঁচগুণ বেড়েছে। আয় না থাকায় অনেকে সেদ্ধ কচুপাতা খেয়ে বেঁচে আছেন।” এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ। যে পরিবার পুরুষ সদস্য সেনাবাহিনীতে পাঠাচ্ছে না, তাদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

ডব্লিউএফপির মতে, রাখাইনের সব সম্প্রদায় এখন চরম অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। অনেক পরিবার ঋণ করছে, ভিক্ষা করছে, সন্তানের পড়াশোনা বন্ধ করছে—এমনকি মানব পাচারের শিকারও হচ্ছে। সংস্থাটি কোনো দেশকে সরাসরি দায়ী না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল কমানোর প্রভাবকে বড় কারণ হিসেবে দেখছে। ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএইড বরাদ্দ ৮৭% কমিয়েছে। অথচ গত বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রই ডব্লিউএফপিকে প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিল।

গত নভেম্বরে জাতিসংঘ রাখাইনে ‘আসন্ন দুর্ভিক্ষ’-এর সতর্কতা দিয়েছিল। নয় মাস পরও তহবিল ঘাটতি পূরণ না হওয়া এবং নতুন করে সাহায্যের আবেদন জানানোই সংকটের গভীরতা স্পষ্ট করে তুলছে।

তথ্য : বিবিসি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত