ঢাকা, বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে কঠোর পরিশ্রম করছি : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার প্রকৃত মালিক—জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বুধবার (১৩ আগস্ট) কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে এক আনন্দমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরর কাছ থেকে তিনি সম্মানসূচক ডক্টরেট সনদ গ্রহণ করেন।
প্রফেসর ইউনূসকে সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর, বাংলাদেশের অনেক তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে এবং ভয়, বৈষম্য ও অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে।”
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যতের আশার নতুন অর্থ তৈরি করেছে। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি—যেখানে শাসনব্যবস্থা ন্যায়সঙ্গত হবে, অর্থনীতি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে সফল হওয়ার জন্য। আমাদের সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী।”
সংস্কারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য বিস্তৃত পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরা আগামী দিনের নির্মাতা। তোমাদের ভাবনা, সৃজনশীলতা এবং দায়িত্ববোধই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে—শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সমগ্র বিশ্বের। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে গিয়ে সবসময় মনে রেখো, প্রকৃত সাফল্য শুধুমাত্র নিজের জন্য অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং কিভাবে তুমি অন্যদেরও উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছ সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে সেরা উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারি তা হলো এমন এক পৃথিবী—যেখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “তোমাদের সিদ্ধান্ত, কাজ এবং মূল্যবোধই নির্ধারণ করবে আমরা কোথায় যাব। তাই বড় স্বপ্ন দেখো, সাহসীভাবে চিন্তা করো এবং সেই অনুযায়ী কাজ করো। ভয় পেও না—প্রত্যেক ব্যর্থতাই সাফল্যের পথে একটি ধাপ মাত্র।”
পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য প্রকৃত নেতা ও সমস্যা-সমাধানকারীর প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “তোমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা রয়েছে অসাধারণ কিছু করার—মানুষের সেবায় ব্যবসা গড়ে তোলার, জীবন বদলে দেওয়ার মতো নতুন ধারণা সৃষ্টির অথবা এমন নীতি প্রণয়নের যা গোটা একটি সম্প্রদায়কে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “আজকের বড় বিপদ হলো—সম্পদ ক্রমশ কয়েকজন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হয়। আমাদের প্রয়োজন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি—যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ মর্যাদা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবে।”
নিজের কর্মময় জীবনের উদাহরণ তুলে ধরে নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূস বলেন, “অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করা থেকে শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করা এবং সামাজিক ব্যবসার প্রচার—সব সময় আমাকে একটি বিশ্বাস দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মানুষ দরিদ্র নয়, ব্যবস্থা তাদের ন্যায্য সুযোগ দেয়নি। তাই আমি এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছি যেখানে দরিদ্রতম মানুষও ক্ষুদ্রঋণ পেতে পারে, ব্যবসা শুরু করতে পারে এবং নিজের জীবন বদলাতে পারে।”
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “দুই দেশ সবসময় দৃঢ় সম্পর্ক ভাগাভাগি করেছে—যা গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উন্নতির যৌথ স্বপ্নের ওপর। আমরা একসাথে অনেক কিছু অর্জন করেছি এবং ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতা চাই।”
মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এখন নতুন যুগে প্রবেশ করছে। আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে চাই। সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র রয়েছে—যেমন সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, হালাল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন। একসাথে আমরা সমৃদ্ধ, উদ্ভাবনী, স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।”
সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করায় মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি এটি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করছি এবং আমাদের দুই দেশের বন্ধন আরও দৃঢ় করার জন্য নতুন অঙ্গীকার করছি। পারস্পরিক শিক্ষা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমরা এমন এক বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি—যেখানে প্রত্যেক মানুষ নিজের সামর্থ্য বিকশিত করার সুযোগ পাবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আব্দুল কাদির এবং ইউকেএম ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সুফিয়ান জুসোহ।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না বস্ত্র খাতের ১৩ কোম্পানি
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৭ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কোম্পানির বাজিমাত
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
- রবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের মুখে গ্রামীণফোন
- টানা পতনেও শেয়ারবাজারে পুনরুজ্জীবনের সংকেত