ঢাকা, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ডিপফেকের শিকার দেশের শতাধিক তারকা, হচ্ছেন ভাইরাল

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহজলভ্যতা ও জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিপফেক ছবি ও ভিডিও এখন বড় ধরনের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। গেল বছর রাশমিকা মান্দানার একটি ভুয়া ভিডিও প্রকাশের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরবর্তী সময়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, আলিয়া ভাট, কাজলসহ অনেক বলিউড তারকার ডিপফেক ভিডিও ব্যাপক সাড়া ফেলে। শুধু বলিউড নয়- বাংলাদেশের পরীমণি, শবনম বুবলী, পূজা চেরি, সাদিয়া আয়মানসহ অনেক তারকার ডিপফেক ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন তারা। প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পীরা।
বর্তমানে দেশের প্রথম সারির অধিকাংশ অভিনেত্রীই ডিপফেকের শিকার। তাদের ছবি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে অশ্লীল কনটেন্ট, যেখানে বিদেশি নারীদের দেহে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে বাংলাদেশি তারকাদের মুখ। এসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তা মুহূর্তেই ভাইরাল হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেকার ও ডিফেন্ট এর সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ‘আমরা খেয়াল করছি, সম্প্রতি ডিপফেক ভিডিও বা ছবি বিনোদন ও রাজনৈতিক মানুষদের নিয়েই বেশি হচ্ছে। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে অর্থ উপার্জনের একটা ব্যাপার আছে। অনেকে এআই দিয়ে ছবি বানিয়ে টাকাও উপার্জন করছে। কিন্তু অনুমতি না নিয়ে অন্যের ছবি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আর সেটা যদি হয় ডিপফেক ছবি-ভিডিও তাহলে সেটা আরও ভয়ঙ্কর অপরাধ। ক্রমেই এগুলো বাড়ছে এবং বাড়বে।’
গত কয়েক মাসে শবনম বুবলী, বিদ্যা সিনহা মিম, মাহিয়া মাহি, শবনম ফারিয়া, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজাবীন চৌধুরী, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, তানজিন তিশা, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, সাদিয়া আয়মান, পারসা ইভানা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, নাজনীন নাহার নিহা, সিমরিন লুবাবাসহ ৬০ জনের বেশি তারকার ডিপফেক ছবি শনাক্ত করেছে ‘রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ’। তারা ছবিগুলোর মালিক ও প্রথম আপলোডকারীর তথ্যও প্রকাশ করেছে। এর বাইরেও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিদিন নতুন নতুন অশ্লীল ডিপফেক ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মোট সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে।
অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান গত দুই মাসে অন্তত ১০ বারের বেশি একই ঘটনার শিকার হয়েছেন। বিব্রত এই শিল্পী বলেন, ‘ডিপফেক এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বিশেষ করে শিল্পীদের টার্গেট করে। এটা নোংরামি ও বড় ধরনের অপরাধ। আমি বহুবার এর শিকার হয়েছি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।’
সম্প্রতি মেহজাবীন চৌধুরীর কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যা আসলে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি ডিপফেক প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নারীদের জন্য সম্মানজনক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে মেহজাবীন বলেন, “এআই যখন ভুল মানুষের হাতে পড়ে, তখন তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে নারী শিল্পীদের ক্ষেত্রে এটা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। নারীদের ছবি ও ভিডিও বিকৃত করে টাকার লোভে তারকাদের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেকেই। এটা খুব নোংরা মানসিকতার পরিচয়, অনৈতিক এবং অপরাধ। আশা করি আমাদের দেশে দ্রুত এমন নিয়ম-কানুন ও শাস্তির ব্যবস্থা হবে যা সবাই বিশেষ করে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করবে।’
এর প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ‘প্রথমত, মানুষের লিগ্যালিটি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে সচেতন হতে হবে। দ্বিতীয়ত, গুটিকয়েক মানুষ এগুলো বানায়। এই গুটিকয়েক অপরাধীকে শনাক্ত করে আইনের মাধ্যমে যদি শাস্তির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এটা বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া আরও কোনো উপায় আমাদের চোখে পড়ছে না।’
ব্যারিস্টার তাসনুভা শেলী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, লিগ্যালাইজড এডুকেশন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাস্টিসিয়া লিগ্যাল মাইন্ডসের চেম্বার-প্রধান। তিনি বলেন, ‘ডিপফেক’ সফটওয়ার ভিত্তিক একটি কার্যক্রম। এই টেকনোলজি ব্যবহার করে মেয়েদের ছবি ও ভিডিও নকল করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার কথা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এগুলো দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইলও করছে। এই তালিতায় প্রথম দিয়ে রয়েছেন সেলিব্রেটিরা।”
তিনি বলেন, “গত এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট পাশ করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে করো ছবি অনুমতি ছাড়া যদি কেউ ব্যবহার করে তাহলে তার শাস্তি হবে। এছাড়া সুইডেনে এখন একটা আইন করা হয়েছে যেখানে একজন মানুষের চেহারাসহ প্রত্যেকটি অঙ্গের কপিরাইট তার নিজের। চাইলে অনুমতি ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। আমাদের দেশে সেটা নেই। তবে আমাদের দেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন আছে এটার মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটাই কমে আসবে। এছাড়া এখন প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। কোনো কিছু জাস্টিফাই না করে শেয়ার করা যাবে না। এটার কোনো বিকল্প নাই।”
কারও অনুমতি ছাড়া আপত্তিকর ছবি কিংবা ভিডিও বানিয়ে প্রকাশ করা সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এ দণ্ডনীয় অপরাধ। ভুক্তভোগীরা বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ ও পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের অভিযোগকেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে পারেন।
এ বিষয়ে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম বিষয়ে যে কোনো সমস্যা সামনে এলে আমরা সেটা নিয়ে কাজ করি। ডিপফেকের বিষয়ে আমাদের দেশের কোনো তারকা থেকে অভিযোগ পাইনি। যদি অভিযোগ পাই তাহলে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করব।’
পুলিশের এ উপকমিশনার আরও বলেন, “এইআই দিয়ে কাজের ফলে মানুষ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় বা অপরাধের শিকার হয় সেখানে আমাদের সুযোগ আছে। সেখানে আমরা অবশ্যই কাজ করব। আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটনে দুই কোটি মানুষের জন্য নিরাপদ সাইবার প্ল্যাটফর্ম উপহার দিতে চাই।”
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না বস্ত্র খাতের ১৩ কোম্পানি
- ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৭ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- সর্বোচ্চ উচ্চতায় ১৭ কোম্পানির শেয়ার
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কোম্পানির বাজিমাত
- রবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের মুখে গ্রামীণফোন
- ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে: বাগছাস
- শেখ সেলিমের ২১টি বিও অ্যাকাউন্ট ও ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- চলতি সপ্তাহে ৬ কোম্পানির ডিভিডেন্ড অনুমোদন
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ