ঢাকা, সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্ব রফতানি মানচিত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল অবস্থান

ডুয়া নিউজ- অর্থনীতি
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১০:৩২:২০
বিশ্ব রফতানি মানচিত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল অবস্থান

২০২৪ সালে তৈরি পোশাক রফতানিতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ প্রায় ৩৮.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা বৈশ্বিক বাজারের প্রায় ৬.৯ শতাংশ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ এখন বাংলাদেশ, যার অবস্থান ভিয়েতনামসহ অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে। যদিও চীন এখনো বাজারে শীর্ষস্থানে রয়েছে, তবে মোট রফতানির উপর নির্ভরতার দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক বেশি কেন্দ্রিক, যেখানে দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই)-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্ব পোশাক বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ৫৫৭.৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে এককভাবে চীন ১৬৫.২৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে বাজারের ২৯.৬৪ শতাংশ দখলে রেখেছে। তবে চীন ধীরে ধীরে তৈরি পোশাক খাত থেকে সরে এসে প্রযুক্তি ও অন্যান্য উচ্চমূল্যের শিল্পে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

বাংলাদেশের মোট রফতানির ৮৬.২০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বিপরীতে চীনের রফতানিতে এই খাতের অংশ মাত্র ৪.৩০ শতাংশ, যা তাদের বহুমুখী রফতানি কাঠামোর পরিচায়ক। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া (৩৬.৭০%), পাকিস্তান (২৬.৮০%), ভিয়েতনাম (৭.৬০%), ইন্দোনেশিয়া (২.৩০%) ও ভারত (২.২০%)—সব দেশেই পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘পাল্টা শুল্কনীতি’ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রফতানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে চীনের তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের ওপর বর্তমানে মোট শুল্কহার ৩৫.৫% থেকে ৩৬.৫% পর্যন্ত, যেখানে চীনের ক্ষেত্রে তা ৪৬% থেকে ৫৫%। যদিও ভারতের (৩৩.৫–৪০.৫%) ও ইন্দোনেশিয়ার (সর্বোচ্চ ৩৪%) শুল্কহার তুলনামূলকভাবে কম, তবুও মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও টিকে আছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের ওপর কড়াকড়ি আরোপের কারণে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ যেমন নতুন বাজার জোগাড় করছে, তেমনই বাজার বৈচিত্র্য ও কৌশলগত প্রস্তুতির প্রয়োজনও বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন যখন পোশাক খাত থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ একটি বড় সুযোগের মুখোমুখি। সস্তা শ্রম, দক্ষ কর্মশক্তি এবং উন্নত উৎপাদন কাঠামো বাংলাদেশের জন্য বড় শক্তি। অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ইতিমধ্যে বাংলাদেশমুখী হচ্ছে।

তবে এ প্রবৃদ্ধিকে দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে উচ্চমূল্যের পণ্যে বৈচিত্র্য, নিজস্ব ব্র্যান্ড গঠন, ডিজাইন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন এখনো পোশাক রফতানিতে সরকারিভাবে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিয়ে প্রতিযোগিতা বজায় রাখছে। ফলে বিশ্ববাজারে তাদের উপস্থিতি এখনও দৃঢ়। বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে অপার সম্ভাবনাও তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে বৈশ্বিক অগ্রগতি নিঃসন্দেহে গর্বের। তবে এ খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে এখনই প্রয়োজন বাজার বহুমুখীকরণ, উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং নীতিগত সহায়তা জোরদার করা। সময়োপযোগী কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও দৃঢ় ও ভারসাম্যপূর্ণ ভিত্তি দিতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত