ঢাকা, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

পাইলট সাগরকে দেওয়া কন্ট্রোল রুমের শেষ বার্তা

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ২৩ ১৮:২৬:০২
পাইলট সাগরকে দেওয়া কন্ট্রোল রুমের শেষ বার্তা

“ইজেক্ট ইমেডিয়েটলি”— বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কন্ট্রোল রুম থেকে পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরকে দেওয়া শেষ নির্দেশ ছিল এটি। কিন্তু সে নির্দেশ পালন করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বিধ্বস্ত হয় প্রশিক্ষণ ফ্লাইট ‘থর-৫৫৫’।

সূত্র জানায়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার এক মিনিট আগেও কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে তৌকিরের যোগাযোগ ছিল। শেষ মুহূর্তে তিনি জানিয়েছিলেন, বিমানটি ‘স্টল’ করেছে অর্থাৎ ডানায় সঠিকভাবে বাতাস প্রবাহিত না হওয়ায় উড্ডয়নে সমস্যা দেখা দেয় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বিমানটি। সঙ্গে সঙ্গেই কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বলা হয় “থর-৫৫৫, ইজেক্ট ইমেডিয়েটলি!”

কিন্তু ওই সংকটময় মুহূর্তে তৌকির ইজেক্ট না করে বিমানটিকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন দিয়াবাড়ির দিকে মোড় ঘোরাতে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বিমানটি বিধ্বস্ত হয় রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনের দ্বিতীয় তলায়।

এই ছিল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের প্রথম একক (সোলো) ফ্লাইট— যা হয়ে উঠল তার শেষ মিশন।

দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলায় বিএএফ উত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে ফাইটার জেটটি। প্রশিক্ষণ মিশনের অংশ হিসেবে আকাশে চক্কর দিতে থাকে। একপর্যায়ে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে তার অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তৌকির জানান, “স্টলড”। এরপর তাকে ঘাঁটিতে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। তখনও তিনি যোগাযোগে ছিলেন। কিন্তু বিমানটি দ্রুত উচ্চতা হারাতে থাকায় দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। শেষ নির্দেশ ছিল “ইজেক্ট!”

পাইলট তৌকির চাইলেই ইজেক্ট করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বিমানটিকে জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। একটি সাহসিক সিদ্ধান্ত যা হয়তো আরও ভয়াবহ প্রাণহানি রোধ করেছে।

বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফাইটার জেট স্টলে গেলে তা দ্রুত নিচের দিকে পতিত হয় এবং তখন সাধারণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইলট বলেন, “যদি সত্যিই ইজেক্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে তাও তৌকিরের পক্ষে বাঁচা কঠিন হতো। অতীতে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ প্যারাসুট দিয়ে নামার পরও প্রাণ হারান।”

বিমানবন্দরের আশপাশে উচ্চ ভবন নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সিভিল এভিয়েশন অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে আবেদন করে আসছে।

দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটি ছিল এফটি-৭ বিজিআই যা মূলত প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবে ব্যবহৃত হলেও যুদ্ধকালীন সময় দেশে ডেলাইট ইন্টারসেপ্টর হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি মডেলের যুদ্ধবিমান রয়েছে মিগ-২৯ এবং এফ-৭ বিজিআই। এফ-৭ গুলো অপেক্ষাকৃত নতুন ও ডে-অপারেশনের জন্য উপযোগী।

রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল ও পাবনা ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তৌকির ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। তার স্ত্রী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক। তৌকিরের পরিবার রাজশাহীতে বসবাস করেন।

এই দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন যাদের মধ্যে রয়েছেন ২৯ শিশু শিক্ষার্থী, ২ শিক্ষক, পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম।

আহত হয়েছেন অন্তত ১৭০ জন। নিহতদের মধ্যে আছেন মাইলস্টোন স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ইউসুফের ছেলে নাফি ইসলাম (৯), সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়ান ইউসুফ (১৪), বাপ্পি (৯), এরিকসন (১৩), অ্যারিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৪) প্রমুখ।

শিক্ষিকা মেহেরিন চৌধুরী (৪৬) সাহসিকতা দেখিয়ে ২০ জন শিক্ষার্থীকে রক্ষা করেন তবে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনিও।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত