ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
বীমা খাতে দুর্নীতি চরমে: গোয়েন্দা প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
-1.jpg)
ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যানরা অনেক ক্ষেত্রে অনুগতদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আইন লঙ্ঘন করে কেউ কেউ সিইওর দায়িত্ব পালন করলেও, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
রাষ্ট্রীয় এক গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই উদাসীনতা বিমা খাতে দুর্নীতিকে উৎসাহ দিচ্ছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়। সঙ্গে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে, যেখানে আইন ভেঙে পাঁচ বিমা কোম্পানিতে চলতি দায়িত্বে থাকা সিইও এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন ও চিঠি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আইডিআরএ-কেও পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মোস্তাফা বলেন, ‘আমাদের কোম্পানিতে নিয়মিত সিইও রয়েছেন। আপনারা কোন প্রতিবেদনের তথ্যের কথা বলছেন, তা আমি জানি না।’
উল্লেখ্য, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে যে, বিমা আইন, ২০১০-এর ৮০(৪) ধারা অনুযায়ী কোনো বিমা কোম্পানির সিইও পদ তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যায় না। তবে প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষ এই মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়াতে পারে।
বিমা আইন-২০১০ এর ৮০(৫) ধারা মোতাবেক, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমা কোম্পানির সিইও পদ পূরণ করা না হলে কর্তৃপক্ষ প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু গার্ডিয়ান লাইফ, সোনালী লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ও রূপালী ইন্স্যুরেন্সে চলতি দায়িত্বে থাকা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মেয়াদকাল অতিবাহিত হওয়ার পরেও বিমা আইন লঙ্ঘন করে নিয়মবহির্ভূতভাবে এখনো চলতি দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আসলে পাঁচটি কোম্পানি না, ১৯টি কোম্পানিতে সিইও নেই। সিইও সংকট তৈরি হয়েছে। এর বিভিন্ন কারণে আছে। সিইও নিয়োগের প্রবিধানমালা খুব বেশি মাত্রায় রেস্ট্রিকটেড হওয়ায় সিইও তৈরি হচ্ছে না এ সেক্টরে।-আইডিআরএর মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি
এর মধ্যে গার্ডিয়ান লাইফে শেখ রাকিবুল করিম ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ, চার বছর ৫ মাস ধরে তিনি চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। সোনালী লাইফে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে এ দায়িত্ব পালন করছেন। মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে সিইও পদে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন এস কে আব্দুর রশিদ।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে মোশাররফ হোসেন ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর থেকে সিইও পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি থেকে দায়িত্বে রয়েছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গার্ডিয়ান লাইফ চার বছরের বেশি সময় আইডিআরএ’র অনুমোদিত সিইও ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং ৬০ দিনের মধ্যে সিইও নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো সিইও নিয়োগ হয়নি। অথচ আইডিআরএ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
একই ধরনের অবস্থায় রয়েছে রূপালী ইন্স্যুরেন্স। দুই বছরের বেশি সময় ধরে অনুমোদিত সিইও ছাড়াই কোম্পানিটি পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানকেও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও ৬০ দিনের মধ্যে সিইও নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সিইও নিয়োগ হয়নি এবং এ ক্ষেত্রেও আইডিআরএ নীরব ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আইন অমান্য করে চলতি দায়িত্বে থাকা সিইও এবং সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে আইডিআরএ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় খাতটিতে দুর্নীতির সুযোগ বাড়ছে।
এছাড়া প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যানরা নিজেদের স্বার্থে অনুগত ব্যক্তিদের সিইও পদে বসান। যোগ্যতা না থাকলেও এই অনুগত ব্যক্তিদের জরিমানা দিয়ে বছরের পর বছর দায়িত্বে রাখেন। ফলে গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি বিমা খাতের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকটি বিমা কোম্পানিতে অযোগ্য ব্যক্তিকে সিইও হিসেবে বহাল রাখার নজির তৈরি হওয়ায় অন্য কোম্পানিগুলোও একই কৌশলে চলার সুযোগ নিচ্ছে। তাই আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইডিআরএ-কে সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদন আইডিআরএ-তে পাঠানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গার্ডিয়ান লাইফের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস. চৌধুরী এবং সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান কাজী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মোস্তাফা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সিইও রয়েছেন। কোন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব বলা হচ্ছে, তা আমার জানা নেই।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার কথা বলে কথা বলতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, আসলে পাঁচটি নয়, ১৯টি বিমা কোম্পানিতে সিইও নেই। বিভিন্ন কারণের কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। সিইও নিয়োগের বিদ্যমান প্রবিধানমালা খুব বেশি কঠোর হওয়ায় দক্ষ সিইও তৈরি হচ্ছে না। তবে নতুন করে প্রবিধানমালা তৈরি হলে এই সংকট কেটে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- চলতি সপ্তাহে বেক্সিমকোর ফ্লোর প্রাইস ওঠার সম্ভাবনা
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে তিন কোম্পানি
- চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
- শেয়ারবাজারে তানিয়া শারমিন ও মাহবুব মজুমদার ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ
- শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে বিক্রেতা সংকটের নতুন দিগন্ত
- শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যত গড়তে পাশে থাকবে ঢাবি অ্যালামনাই
- ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের অছাত্ররা হতে পারবেন না ভোটার-প্রার্থী
- শেয়ারের অস্বাভাবিক দামের জন্য ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শোক সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পলক
- স্টক ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ১৫ দিনে ১৭ প্রতিষ্ঠানে ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা
- ডিভিডেন্ড পেয়েছে চার কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- সর্বোচ্চ আগ্রহের তালিকায় ৪ খাতের শেয়ার
- বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ চাহিদার শীর্ষে ৭ কোম্পানি
- ১৬ জুলাই সরকারি ছুটি কি-না? যা জানা যাচ্ছে