ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিলেন যে বাঙালি পাইলট

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ২৬ ১১:০৯:৩৬
ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিলেন যে বাঙালি পাইলট

১৯৬৭ সালের ৫ জুন মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় ঐতিহাসিক ছয় দিনের যুদ্ধ। ইসরাইল হঠাৎ করেই মিশর, জর্ডান, সিরিয়া ও ইরাকের বিমান ঘাঁটিগুলোর ওপর ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। মাত্র আধ ঘণ্টায় মাটিতে দাঁড়ানো ২০০-রও বেশি মিশরীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দেয় ইসরাইলি বিমানবাহিনী। এরই অংশ হিসেবে জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালায় চারটি ইসরাইলি ফাইটার জেট। কিন্তু এই অভিযানের মাঝপথেই এক সাহসী বাঙালি পাইলট তাদের পরিকল্পনায় বড়সড় ছন্দপতন ঘটান।

তার নাম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম। সে সময় তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে জর্ডান বিমানবাহিনীর উপদেষ্টা ছিলেন। মাফরাক ঘাঁটির কাছাকাছি অবস্থানকালীন সময়ে তিনি হান্টার জঙ্গি বিমানে চড়ে ইসরাইলি বিমানগুলোর মুখোমুখি হন এবং মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একটি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করেন।

এরপর ৭ জুন ইরাকের পক্ষে যুদ্ধরত অবস্থায় আরও দুটি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেন তিনি। এর আগে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিমানও ধ্বংস করেছিলেন। ফলে তিনটি ভিন্ন ফ্রন্টে, দুইটি দেশের বিরুদ্ধে চারটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। বিশ্বের ইতিহাসে তিনটি ভিন্ন দেশের বিমানবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করে শত্রু বিমান ভূপাতিত করা পাইলটদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশন পাওয়া সাইফুল আজম ‘সিতারা-ই-জুরাত’ পদকে ভূষিত হন। জর্ডানে এবং পরে ইরাকে তার সাহসিকতা কিংবদন্তিতে রূপ নেয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন এবং দেশের এভিয়েশন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

২০০১ সালে তাকে ‘লিভিং ঈগল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক হল অফ ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এয়ার কমোডর মোহাম্মদ আলীর ভাষায়, সাইফুল আজম হলেন একমাত্র পাইলট যিনি পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও বাংলাদেশের বিমানবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ভারত ও ইসরাইল—এই দুই দেশের যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে তার উপস্থিত বুদ্ধি এবং কৌশলী সিদ্ধান্ত একাধিকবার তাঁকে ও তাঁর সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করেছে। মাফরাক বিমানঘাঁটির কাছে ইসরাইলি ফাঁদে পা না দিয়ে তিনি বিমানগুলোকে আম্মানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করান।

অবসরের পর তিনি বাংলাদেশে সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের জুনে তাঁর মৃত্যু হয় কিন্তু ইসরাইলের প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোতেও তখন তাঁর বীরত্বের স্মরণে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। একসময় যাঁর গুলিতে বিমান ধ্বংস হয়েছিল সেই ইসরাইলি পাইলটও পরে জানিয়েছিলেন— সাইফুল ইচ্ছে করলেই তাঁকে হত্যা করতে পারতেন কিন্তু করেননি।

ছয় দিনের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কিন্তু এই যুদ্ধের ইতিহাসে সাইফুল আজমের সাহসিকতা এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত