ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের যে ইস্যুতে গভীর দুশ্চিন্তায় ইসরায়েল

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ১৮ ১৫:৪৭:৫৯
ইরানের যে ইস্যুতে গভীর দুশ্চিন্তায় ইসরায়েল

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা এখনো থামেনি। ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য হলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হলো—ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো এমনভাবে নির্মিত হয়েছে যে সেগুলো মাটি থেকে অনেক গভীরে যেখানে সাধারণ বিমান হামলা কোনো কাজেই আসে না।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মতে, তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র মাটির অন্তত ৪০ থেকে ৫০ মিটার গভীরে যার চারদিকে রয়েছে আড়াই মিটার পুরু কংক্রিট দেয়াল।

নাতানজ ও ফরদো: ইরানের শক্ত ঘাঁটি

পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি’ অনুযায়ী, নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রটি প্রায় ৮০ মিটার গভীরে অবস্থিত। সেখানে রয়েছে দুটি প্রধান ইউনিট ও তিনটি বড় ভবন যেখানে ৫০ হাজার সেন্ট্রিফিউজ বসানো সম্ভব।

আরেকটি কেন্দ্র ফরদো যা তেহরান থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম শহরের কাছে অবস্থিত। এটি প্রায় ৮০-৯০ মিটার গভীরে পাহাড়ের পাথরের নিচে তৈরি এবং উচ্চ মাত্রায় সুরক্ষিত। ফরদো কেন্দ্রেও রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ব্যবস্থা যেখানে ৩,০০০ সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে।

ইসরায়েলের সীমাবদ্ধতা

নাতানজে অতীতে ইসরায়েলি হামলায় কিছু সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে। কিন্তু যেসব স্থাপনাগুলো এত গভীরে অবস্থিত সেগুলোতে ইসরায়েলের প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা কার্যত অসম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (বাংকার বাস্টার) বোমা দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ মিটার গভীরে আঘাত করা সম্ভব। কিন্তু এই প্রযুক্তি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই রয়েছে। ইসরায়েলের নিজস্ব অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা—দ্য রক্স ও এয়ার লরা—মাত্র ৬ থেকে ১০ মিটার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম।

ফলে ইসরায়েল এখন কেবল মাটির উপরের সাবস্টেশন বা কুলিং স্টেশনগুলো টার্গেট করে ক্ষণস্থায়ী ক্ষতি করতে পারছে যা মূল প্রকল্পে বড় ধরনের স্থায়ী ক্ষতি করে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং সম্ভাব্য যুদ্ধ

যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়ায়নি তবে তারা ইসরায়েলকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করছে। কিন্তু মার্কিন সেনারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তা শুধু ইরান-ইসরায়েল নয় বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোর গভীরতা, সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল একা তার বর্তমান সামরিক শক্তি দিয়ে এই স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে পারবে না আর এখানেই মূল দুশ্চিন্তার কারণ।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত