ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক সংকটে, দূতাবাস কর্মী সরাচ্ছে ওয়াশিংটন

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ১২ ১৪:৫৯:০৬
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক সংকটে, দূতাবাস কর্মী সরাচ্ছে ওয়াশিংটন

নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে অপ্রয়োজনীয় কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি বুধবার (১১ জুন) মার্কিন সরকারের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বর্তমানে ইরাকে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। একই সঙ্গে অঞ্চলটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে ইসরায়েলের সম্ভাব্য ইরানবিরোধী সামরিক অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর। এর জেরে কিছু মার্কিন নাগরিককে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

সিবিএস নিউজ-এর বরাত দিয়ে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ইরানে কোনো সামরিক পদক্ষেপের জবাবে ইরাকের ভেতরে অবস্থিত মার্কিন স্থাপনাগুলোতে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, “প্রতিটি দূতাবাসের কর্মীবিন্যাস নিয়ে আমরা নিয়মিত মূল্যায়ন করি। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বাগদাদে মার্কিন মিশনের পরিসর সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। যদিও মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের আগামী রবিবার ইরানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা রয়েছে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই অঞ্চল এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তাই আমেরিকান নাগরিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চায় না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করুক। আমরা তা হতে দেব না।”

এদিকে, ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে চলতি সপ্তাহে ৪০ মিনিটের একটি টেলিফোনালাপ হয়, যা ‘টানাপোড়েনপূর্ণ’ ছিল বলে জানা গেছে। নেতানিয়াহু বরাবরই কূটনৈতিক পথের চেয়ে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দিয়ে আসছেন।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইরানের সহযোগিতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, কয়েকটি গোপন স্থানে পারমাণবিক উপাদান মিললেও সেগুলোর ব্যাপারে ইরান কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। যদিও ইরান এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এতে ব্যবহৃত তথ্য ইসরায়েল সরবরাহ করেছে।

এই পরিস্থিতিতে মার্কিন কর্মী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিছক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, না কি ইরানকে কৌশলগত বার্তা দেওয়ার অংশ—তা স্পষ্ট নয়।

এদিকে, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে এবং যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তবে ইরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালাবে।

এমন সময় ব্রিটেনের রয়্যাল নেভির সহযোগী সংস্থা মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সতর্ক করে বলেছে, এই সামরিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিশেষত সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত