ঢাকা, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পরমাণু চুক্তি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ০৯ ১৫:১২:৪০
পরমাণু চুক্তি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাবকে ‘একতরফা সমঝোতা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ। তিনি বলেন, প্রস্তাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ না থাকাটা যুক্তরাষ্ট্রের অসততার প্রমাণ।

রবিবার (৮ জুন) ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিওবার্তায় গালিবাফ বলেন, “যদি বিভ্রান্তিতে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট সত্যিকারের সমঝোতা চান, তবে তাকে তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।”

ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দফা গোপন আলোচনার লক্ষ্য ছিল ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির একটি বিকল্প খোঁজা। ইরান শর্ত ছিল— নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পরমাণু কর্মসূচিতে নিয়ন্ত্রণ আনবে। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে সরে যান।

গত ৩১ মে ইরান জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তারা একটি খসড়া প্রস্তাব পেয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তিকর শর্ত থাকায় সমালোচনা করে তেহরান।

চলমান আলোচনা ঘিরে দু’টি মূল ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে— এক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার; দুই, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। ইরান বলছে, তারা আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তির আওতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার রাখে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসন, বিষয়টিকে ‘রেড লাইন’ হিসেবে দেখছে।

আইএইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ইরান বিশ্বের একমাত্র অ-পারমাণবিক দেশ, যারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে— যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।

সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের পরমাণু নীতির ‘মূল চাবিকাঠি’। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানেরও ঘোষণা দেন।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার (১০ জুন) অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র বোর্ড সভা, যেখানে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।

ইরানের পরমাণু সংস্থা (AEOI)-র মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি রোববার হুঁশিয়ারি দেন, “IAEA যদি কোনো বিরূপ প্রস্তাব নেয়, তবে সহযোগিতার মাত্রা কমিয়ে আনা হবে।”

এর আগে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি আইএইএ-তে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর ‘উসকানিমূলক’ ভূমিকার সমালোচনা করেন এবং এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, “ইরানের অধিকার লঙ্ঘিত হলে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।”

গত সপ্তাহে আইএইএ এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরান তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না এবং সেখানে কিছু গোপন উপকরণ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তেহরান এই প্রতিবেদনকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘ইসরায়েলের দেওয়া ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি’ বলে অভিহিত করেছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত