ঢাকা, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রবাসে আপনজনহীন নিঃসঙ্গ ঈদ

ডুয়া নিউজ- প্রবাস
২০২৫ জুন ০৭ ১০:০৯:৪৩
প্রবাসে আপনজনহীন নিঃসঙ্গ ঈদ

প্রবাসের ঈদ মানেই এক ভিন্ন রকম অনুভূতি। ঈদের খুশি আসে ঠিকই, তবে প্রবাসের আকাশে যেন সেই আনন্দও কিছুটা বিবর্ণ হয়ে যায়। হাজার মাইল দূরে থেকেও প্রিয়জনের স্মৃতি ঈদের সকালে আরও বেশি করে নাড়া দেয় প্রবাসীদের মনে। অনেক প্রবাসী ঈদের দিনেও ছুটি পান না। কেউ কর্মস্থলে, কেউ দোকানে কিংবা রেস্টুরেন্টের ব্যস্ততায় দিন শুরু করেন। ঈদের জামাতে নামাজ আদায়ের সুযোগ হয়ে ওঠে না সবার। আশপাশে থাকে না কোনো আপনজন, থাকে না আলিঙ্গনের উষ্ণতা। থেকে যায় শুধু দায়িত্ব, দূরত্ব আর একাকিত্ব। ভিডিও কলেই দেখতে হয় মায়ের অশ্রুসিক্ত চোখ আর সন্তানের মুখের হাসি। এই হলো প্রবাসের ঈদ নিঃসঙ্গতা, ত্যাগ আর প্রতীক্ষার দিন।

গ্রিসের এথেন্সের ওমোনিয়া এলাকার একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে দেখা গেল কয়েকজন প্রবাসী একত্রিত হয়ে পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন। কারও চোখে আনন্দাশ্রু, কারও মুখে হাসি আর কারও বুকে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস। এ যেন এক মিশ্র অনুভবের ঈদ।

আলাপকালে গ্রিস প্রবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে দশটি ঈদ কাটালাম পরিবারের বাইরে। সকালে উঠে আব্বা-আম্মার জন্য দোয়া করি। নামাজ শেষে চোখ ভিজে যায়। তখন মনে হয়, কেন এত দূরে এলাম।

একই কথার প্রতিধ্বনি করলেন প্রবাসী জুবায়ের আহমেদ। বললেন, কখনো কখনো ঈদের দিনও কাজে থাকতে হয়। যখন সবাই জামাতে নামাজ পড়ে, আমরা তখন ব্যস্ত কর্মস্থলে। ফোনে মা কান্না করে বলেন তুই নামাজ পড়লি? আমি তখন নিরুত্তর। প্রবাসে ঈদের দিনটা আরও একা করে দেয়।

গ্রিসের এক দ্বীপে রেস্টুরেন্টে কাজ করা অলিউর রহমান এবার এথেন্সে বাংলাদেশি মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তিনি বলেন, হাজারো মানুষের ভিড়েও নিজেকে বড় একা লাগে। এমন এক জায়গায় আছি, যেখানে কেউ এসে জড়িয়ে ধরে বলে না ঈদ মোবারক।

ঈদের জামাতে অনেক বাংলাদেশি নারীও অংশ নেন। তাদের জন্য ছিল আলাদা নামাজের আয়োজন। পর্তুগাল প্রবাসী তন্নী আক্তার, যিনি এক বছর আগে পারিবারিক ভিসায় প্রবাস জীবন শুরু করেছেন, জানালেন, নারী হয়ে প্রবাসে থাকা এমনিতেই কঠিন, আর ঈদের দিনটা তো আরও বেশি কষ্টের। মা-বোন ভিডিও কলে বলল— তুমি না থাকলে ঈদের আনন্দই নেই। তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।

সব অনুভূতির ভিড়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এক বাস্তবতা— ঈদ শুধু উৎসব নয়, প্রবাসীদের কাছে এটি এক নীরব কান্না। তারা হয়তো চোখের জল লুকিয়ে রাখেন, কিন্তু হৃদয়ে বয়ে বেড়ান স্মৃতি, ব্যথা আর একটুখানি দেশে ফেরার অপেক্ষা।

উল্লেখ্য, শুক্রবার এথেন্সের বোটানি এলাকায় সরকার অনুমোদিত মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নেন প্রবাসী বাংলাদেশি-সহ অন্য দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত