ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গুম কমিশনের হাতে ১,৮৫০ অভিযোগ

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুন ০৪ ১৭:৪১:১৪
গুম কমিশনের হাতে ১,৮৫০ অভিযোগ

গুম সংক্রান্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি জানিয়েছে গঠিত তদন্ত কমিশন। এখন পর্যন্ত কমিশনের কাছে জমা পড়েছে ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনের ধারণা, চূড়ান্ত সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখনও তিন শতাধিক গুম হওয়া ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন তুলে দেন কমিশনের সদস্যরা। এতে নেতৃত্ব দেন কমিশনপ্রধান সাবেক বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন ও নাবিলা ইদ্রিস। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং বই আকারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষয়টি শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গভীর আগ্রহ তৈরি করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “একেকটি ঘটনার বর্ণনা শিউরে ওঠার মতো। সমাজের তথাকথিত ভদ্রজনেরা, আমাদের পরিচিতজনরাই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিন বাই তিন ফিটের অন্ধকার খুপড়িতে দিনের পর দিন, এমনকি মাসের পর মাস বন্দি থাকার যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, তা তুলে ধরতে একটি ‘হরর মিউজিয়াম’ গড়ে তোলা উচিত।”

কমিশনকে দেওয়া নির্দেশনায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ ও করণীয় তুলে ধরা হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে কোনটি কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে, তা উল্লেখ করুন। যাতে স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”

কমিশনের একজন সদস্য জানান, “এই ঘটনাগুলো এতটাই গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে যে, অনেক কর্মকর্তা—যারা অতীতে এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন—আজ অনুশোচনায় ভুগছেন। দুজন কর্মকর্তা লিখিতভাবে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন, যা গণভবনে পাঠানো হয়েছে। এমনকি তৎকালীন সেনাপ্রধানও এসব চিঠির কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।”

গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার যেন অন্তত আর্থিক লেনদেন ও সামাজিক সেবা গ্রহণে আইনি স্বীকৃতি পায়—এ জন্য প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কমিশনপ্রধান। তিনি প্রস্তাব করেন, “বর্তমানে সাত বছর নিখোঁজ থাকলে আইনি দৃষ্টিতে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। এ সময়সীমা কমিয়ে পাঁচ বছর করা যেতে পারে।”

সবশেষে, কমিশনের সাহসী ও নিরলস পরিশ্রমের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা ভয়, হুমকি, রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আপনারা এ দেশের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যতের মানবাধিকারকর্মীরা আপনাদের পথ অনুসরণ করবে।”

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত