ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

সংজ্ঞায় পরিবর্তন, মুক্তিযোদ্ধা থেকে বাদ পড়ছেন শেখ মুজিব

২০২৫ জুন ০৪ ০৯:৫৮:৪৮

সংজ্ঞায় পরিবর্তন, মুক্তিযোদ্ধা থেকে বাদ পড়ছেন শেখ মুজিব

১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এবার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। মঙ্গলবার (৩ জুন) দিবাগত রাতে রাষ্ট্রপতি এ অধ্যাদেশের গেজেট জারি করেন।

অধ্যাদেশে নতুন সংজ্ঞার পাশাপাশি আগের আইনের ১০টি ধারায় বেশ কিছু সংশোধনও আনা হয়েছে। আগের আইনের প্রস্তাবনার জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিবুর রহমান শব্দগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, '১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়া, যোদ্ধাদের চিকিৎসায় যুক্ত এবং নির্যাতিত নারীরাই কেবল বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। এর বাইরে মুজিবনগর সরকারসহ দেশে-বিদেশে যারা বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদেরকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দেওয়া হবে।'

নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হবে।

ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় থাকা অনেকেই এখন থেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নয়, বরং ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। সে হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ৪০০ জন এমএনএ বা এমপিএ-কে আর বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। তারা এখন থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। তবে এতে তাদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে গ্রাম-গঞ্জে থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম নিবন্ধন করেছেন ও সক্রিয়ভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসর—যেমন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, এমন সকল বেসামরিক নাগরিক, যাদের বয়স সরকারের নির্ধারিত সর্বনিম্ন সীমার মধ্যে ছিল তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবেন।

এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সদস্য ও স্বীকৃত বাহিনী যেমন নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স এবং আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পাবেন।”

এছাড়াও হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা নির্যাতিত সকল নারীকে 'বীরাঙ্গনা' হিসেবে এবং মুক্তিযুদ্ধকালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ফিল্ড হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশে থেকে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে গতিশীল করতে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন, আন্তর্জাতিক জনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন আদায় এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি সঞ্চয়ে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন—তাদেরই মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।”

এই শ্রেণিতে কারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে গণ্য হবেন তা-ও নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গেজেটে বলা হয়েছে, 'যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং ওই সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ যারা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলা-কুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।'

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত