ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মুনাফায় শেয়ারবাজারের ৭ ব্যাংক, তবু খালি হাতে বিনিয়োগকারীরা

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ মে ৩০ ১৫:৫৬:০৫
মুনাফায় শেয়ারবাজারের ৭ ব্যাংক, তবু খালি হাতে বিনিয়োগকারীরা

২০২৪ সালে মুনাফায় রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৬ ব্যাংক। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি ডিভিডেন্ড নীতিমালার কারণে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি।

ডিভিডেন্ড না দেওয়া এসব ব্যাংক হলো— এনআরবিসি ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং ওয়ান ব্যাংক। ২০২৩ সালে এই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের ২% থেকে ১৫% পর্যন্ত ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ মার্চ ঘোষিত ডিভিডেন্ড নির্দেশিকা পূরণে ব্যর্থ হওয়াতেই এসব ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি।

২০২৪ সালের বাৎসরিক আর্থিক প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, এই সাত ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি— এনআরবিসি ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক— আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম মুনাফা করেছে।

তবে ওয়ান ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। তারপরও ওয়ান ব্যাংক ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি, কারণ তারাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকটি ২৬ মে বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এদিকে, আইএফআইসি ব্যাংক এবার লোকসাননে খাতায় নাম লিখিয়েছে। তবে ব্যাংকটির ভালো রিজার্ভ রয়েছে এবং এর ক্যাশ ফ্লোও অনেক পজিটিভ।

ডিএসই তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে আর্থিকভাবে সুস্থ এক ডজনের বেশি ব্যাংক ২০২৪ সালের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে প্রায় দুই ডজন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারছে না।

ফলে ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন এবং ডিভিডেন্ড ঘোষণার জন্য বোর্ড মিটিং আহ্বান করেও ১৯টি ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে সভা আয়োজন করতে পারেনি এবং একাধিকবার সময় পরিবর্তন করেছে।

আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে বছরের শেষ হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে ডিভিডেন্ড ও আর্থিক প্রতিবেদন ঘোষণা করতে হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে এ সময়সীমা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

যে পাঁচ ব্যাংকের মুনাফা কমেছে

এনআরবিসি ব্যাংক ২০২৪ সালে প্রতি শেয়ার আয় (ইপিএস) দেখিয়েছে মাত্র ৮ পয়সা, যা ২০২৩ সালের ২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৯৬% কম।

ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, পরিচালন মুনাফা কমে যাওয়া, প্রভিশনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং ডিপোজিটের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই ইপিএস কমে গেছে।

২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকেও ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে মাত্র ৮ পয়সা, যেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৪৪ পয়সা।

এসবিএসি ব্যাংকের ইপিএস ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ পয়সায়, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০% কম (২০২৩ সালে ছিল ৬৬ পয়সা)।

এক্সিম ব্যাংক ইপিএস ২০২৪ সালে কমেছে ৯২%, দাঁড়িয়েছে ১৮ পয়সায়, যেখানে ২০২৩ সালে ছিল ২ টাকা ৩৩ পয়সা।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ইপিএস কমেছে ৪০%, ২০২৪ সালে হয়েছে ৭৪ পয়সা, যা ২০২৩ সালে ছিল ১ টাকা ২৪ পয়সা। তবে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যাংকের ইপিএস ৭% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ পয়সা।

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ২০২৪ সালে ইপিএস দেখিয়েছে ৬৬ পয়সা, যা আগের বছরের ২ টাকা ৪ পয়সা থেকে ৬৮% কম।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে ৬ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকার প্রভিশন রাখতে বললেও ব্যাংকটি রেখেছে মাত্র ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাকি প্রভিশন পরবর্তীতে রাখা হবে। এ কারণেই ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

মুনাফা বৃদ্ধির পর ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি ওয়ান ব্যাংক

ওয়ান ব্যাংক ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় ১৪% মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২৪ পয়সায়, যা ২০২৩ সালে ছিল ১ টাকা ৯ পয়সা।

তবুও ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি। এটি ব্যাংকটির তালিকাভুক্তির পর প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা।

২০২৩ সালে ব্যাংকটি ৩.৫% ক্যাশ এবং ৩.৫% স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

এ বিষয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এএসএম শহীদুল্লাহ খান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের ডিভিডেন্ড দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। এমনকি শুধুমাত্র স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার আবেদনও অনুমোদন পাইনি।”

তিনি আরও বলেন, “যেসব ব্যাংক ঋণখেলাপির বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি পূরণে ডিফারাল সুবিধা নিয়েছে, সেসব ব্যাংককেই ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে দেওয়া হচ্ছে না।”

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত