ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২
শেয়ারবাজারে বড়দের দাপট, ছোটদের পিছুটান

দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাঠামোতে এক নতুন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যেখানে এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকা বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে এক লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ থাকা ছোট অ্যাকাউন্টগুলোর সংখ্যায় দেখা গেছে বড় পতন। এই প্রবণতা শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিএসইসির তথ্যমতে, ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকা বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩৮১টি বা ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয়, বড় বিনিয়োগকারীরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে আস্থা রাখছেন এবং তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াচ্ছেন। এটি বাজারের প্রতি তাদের ইতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন।
অন্যদিকে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য চিত্রটি ভিন্ন। এক লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ থাকা বিও অ্যাকাউন্টগুলোর সংখ্যা ৮৪ সহাজার ৪০৯টি কমেছে, যা ৯ শতাংশ হ্রাস নির্দেশ করে। এর ফলে এই শ্রেণীর মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৮.৩১ লাখে নেমে এসেছে। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টতই দেখাচ্ছে, বাজারের ক্ষুদ্রতম অংশ থেকে বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছে এমন উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করতে বিএসইসি বিও অ্যাকাউন্টের প্রবণতা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, যদিও অত্যন্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, তবে বৃহৎ আকারের এবং ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিএসইসি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, "সম্প্রতি কিছু প্রতিবেদনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমার কথা বলা হয়েছে। তবে আমাদের বিও অ্যাকাউন্টের পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারীরা তাদের অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছেন। একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পতন মূলত খুব ছোট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে – যাদের পোর্টফোলিওর মূল্য এক লাখ টাকার নিচে।"
এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিএসইসি বোঝাতে চাইছে, সামগ্রিক বিনিয়োগকারী ভিত্তি দুর্বল হয়নি, বরং বিনিয়োগকারীদের শ্রেণিগত বিভাজন পরিবর্তিত হচ্ছে। সম্ভবত বাজারের অস্থিরতা বা ডিভিডেন্ডরর প্রত্যাশিত প্রাপ্তি না হওয়ায় ছোট বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি তুলে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং বড় অংকের বিনিয়োগকারীরা বাজারের দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনায় আস্থা রেখে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছেন।
এই প্রবণতা শেয়ারবাজারের জন্য মিশ্র বার্তা বয়ে আনছে। একদিকে, বড় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি বাজারের গভীরতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে। কারণ তাদের বিনিয়োগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং তারা বাজারকে সহজে প্রভাবিত করতে পারেন না। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমে যাওয়া বাজারের তারল্য এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কমানোর ঝুঁকি তৈরি করে, যা বাজারের সার্বজনীনতা এবং গণতান্ত্রিক চরিত্রের জন্য ইতিবাচক নয়।
তবে বিএসইসির এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেন বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের আস্থাহীনতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে শেয়ারবাজার একটি টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথে এগোতে পারে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- এক কোম্পানির দাপটেই চাঙা শেয়ারবাজার
- শেয়ারবাজারের উত্থান কি টেকসই হবে? বিশ্লেষকরা যা বলছেন
- দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে ১৪ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন
- ২২ জুলাই : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- চাহিদার তুঙ্গে ১০ কোম্পানির শেয়ার
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বহুজাতিক তিন কোম্পানি
- ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে নতুন নির্দেশনা
- এক বহুজাতিকের ধাক্কায়ই কেঁপে উঠল শেয়ারবাজার
- চলতি সপ্তাহে আসছে ৬৫ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল ১৮ প্রতিষ্ঠান
- শেয়ারবাজারে চলছে বহুজাতিক কোম্পানির ডিভিডেন্ড উৎসব
- সাত কোম্পানিতে বিনিয়োগ বেড়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের