ঢাকা, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২
শেয়ারবাজারের নিঃশ্বাস রুদ্ধ, বিনিয়োগকারীদের চোখে শুধুই আকুতি

করোনা মহামারির পর অনেক দেশ যখন শেয়ারবাজারকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছে, তখন বাংলাদেশে শেয়ারবাজার যেন উল্টো পথে হাঁটছে। দেশের সম্ভাবনাময় এই বাজারটি বর্তমানে আস্থার সংকট, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগকারীর হতাশায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
গত ছয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১৮৬ পয়েন্ট হারিয়েছে। সর্বশেষ বুধবার (২৭ মে) সূচক একদিনেই কমেছে প্রায় ৬৩ পয়েন্ট বা ১.৩৪ শতাংশ। এখন সূচকের অবস্থান ৪ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে, যা ২০২০ সালের ১০ আগস্টের পর সর্বনিম্ন।
এদিন বাজারের ১৯টি খাতের মধ্যে ১৮টিতেই দরপতন হয়েছে। লেনদেন ২৬৫ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে, যা গত এক দশকের গড় লেনদেনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। একই দিনে বাজারমূলধন কমেছে প্রায় ৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বাজারের সূচক, লেনদেন ও বাজারমূলধন—তিন সূচকেই একযোগে পতন ঘটছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি ‘ধসাত্মক’ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ধারাবাহিক মন্দার ধাক্কায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন নিয়ে এই বাজারে পুঁজি এনছিলেন। কেউ অবসরকালীন সঞ্চয় বিনিয়োগ করেছেন, কেউবা ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ভেবেছিলেন—সব স্বপ্ন এখন হুমকির মুখে। বিনিয়োগকারী রাশেদ আহমেদ বলেন, “ভালো বা খারাপ শেয়ার বলে কিছু নেই, প্রতিদিনই দরপতন হচ্ছে। আমার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পুঁজি নেই হয়ে গেছে।” আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, “এই বাজার এখন আর গন্তব্য নয়, এটা যেন একটা ফাঁদ।”
আমায়া সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা তানজিল আহমেদ মনে করেন, “আগে একধরনের আস্থার সংকট ছিল, তবে আশাও ছিল। কিন্তু এখন আছে হতাশা ও অনিশ্চয়তা। বাজার এখন যেন ‘আইসিইউতে’ রয়েছে।”
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। এখানে রয়েছে বিপুলসংখ্যক খুচরা বিনিয়োগকারী, শক্তিশালী কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ভবিষ্যৎমুখী অর্থনীতির সম্ভাবনা। যদি সময়োপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তাহলে এই বাজার যেকোন সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
প্রয়োজন শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, দুর্বল কোম্পানির তালিকাচ্যুতি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজার এখন এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সম্ভাবনা ও সংকট পাশাপাশি অবস্থান করছে। সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকর উদ্যোগ থাকলে সম্ভাবনাগুলো জেগে উঠবে। না হলে শেয়ারবাজার কেবল ‘আইসিইউ’তেই থাকবে না, তা একদিন 'কমা'য়ও চলে যেতে পারে—যেখান থেকে ফিরিয়ে আনা আরও কঠিন হবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- যারা বৃত্তি পাবে না, তাদের জন্য পার্ট-টাইম জবের চিন্তা-ভাবনা
- ডুয়া নিউজের বিশেষ প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা!
- ডিভিডেন্ড-ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল ১৯ কোম্পানি
- বহুজাতিক কোম্পানির ‘এ’ ক্যাটাগরিতে প্রত্যাবর্তন
- ডিভিডেন্ড-ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল ১২ কোম্পানি
- সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, এনসিপির সকল কার্যক্রম স্থগিত
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- শেয়ারবাজারে চমক দেখাল দুই বহুজাতিক কোম্পানি
- ৬ জায়গায় হবে ডাকসুর ভোটগ্রহণ
- জুলাই স্মৃতি জাদুঘর: টেন্ডার ছাড়াই ১১১ কোটি টাকার কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান
- সর্বোচ্চ চাহিদার শীর্ষে ৪ কোম্পানির শেয়ার
- পাঁচ কোম্পানির শেয়ারে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ
- যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বাজার থেকে বাদ পড়তে পারে বাংলাদেশ
- ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই’
- শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে ডিএসইর সতর্কতা