ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
এফটিএ চুক্তি বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র
.jpg)
ডুয়া ডেস্ক: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, উচ্চপর্যায়ের অংশীজনদের সঙ্গে এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্র এবার এফটিএ স্বাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যেখানে অতীতে বাংলাদেশের আহ্বান সত্ত্বেও ওয়াশিংটন তেমন সাড়া দেয়নি।
চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে এবং তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য ও প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এফটিএ বিষয়ক আলোচনার জন্য একটি আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) আয়েশা আক্তারকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। গত ১২ মে গঠিত এই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে চুক্তির খসড়া প্রণয়ন করে বাণিজ্য সচিবের কাছে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এফটিএ বাস্তবায়িত হলে উভয় দেশই লাভবান হবে এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে বলেও তারা মনে করছেন।
এর আগে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়েও আলোচনা হয়। তখন বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এবং এফটিএ প্রস্তাব দেয়। আলোচনার ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে একটি খসড়া চুক্তি পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছে।
চুক্তির দিকনির্দেশনা এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং উভয় দেশের মধ্যে শিগগিরই আরেক দফা আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান শুল্ক কাঠামোতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বড় বৈষম্যের শিকার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ওপর গড় শুল্ক ১৫ শতাংশ, অথচ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে গড় শুল্ক মাত্র ৬.১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি কাঁচা তুলা ও স্ক্র্যাপ লোহা আমদানি করে, যেগুলোর ওপর যথাক্রমে ০ শতাংশ ও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
বিশেষ করে পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখোমুখি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের গড় আমদানি শুল্ক ১৫-১৬ শতাংশ। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হলে এই শুল্ক হ্রাস বা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার হতে পারে, ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাক আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। এফটিএ কার্যকর হলে নতুন ক্রেতা আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং রফতানি আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আসবে।
এই সম্ভাবনা বাস্তবে পরিণত হলে দেশের টেক্সটাইল ও সুতা উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, যার ধারাবাহিকতায় তৈরি পোশাক শিল্পে সম্প্রসারণ ঘটবে এবং লাখো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে— প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবে।
তবে চুক্তির সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক শ্রমমান, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ ও ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কড়া অবস্থানে থাকে। এফটিএ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা ও গ্রিন ফ্যাক্টরি গঠনের ওপরও জোর দিতে হবে।
এফটিএ আলোচনার অগ্রগতি কৃষি খাতেও সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একটি সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য বাজার হলেও এখনো তা সীমিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চুক্তির ফলে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা হ্রাস পেলে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য— যেমন আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, ড্রাগন ফল, আলু, চা, মসলা, ফুল, শুঁটকি ও মাছ— যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ দক্ষিণ এশীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও জনপ্রিয় হবে। ফলে কৃষি রফতানি বহুগুণে বাড়বে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ফ্রোজেন ফুড, প্যাকেটজাত মসলা, হালাল মাংস, শুকনা ফলমূল, রেডি-টু-ইট খাবারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরিত হলে এসব পণ্য সহজেই রফতানি ঝুড়িতে যুক্ত হতে পারে, যা বাংলাদেশের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যখাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
চুক্তির আওতায় কৃষি যন্ত্রপাতি, হাইব্রিড বীজ, স্মার্ট সেচ প্রযুক্তি এবং আইওটি-নির্ভর কৃষিনির্ভর প্রযুক্তি সহজ শর্তে আমদানি করা সম্ভব হবে। এতে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং কৃষকরা প্রযুক্তির সুফল পেয়ে আরও লাভবান হবেন।
এগ্রোটেক ও ফুড প্রসেসিং খাতে উদীয়মান উদ্যোক্তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকর্ষণ ও মার্কেট এক্সেসের সুযোগ তৈরি হবে। এতে এই খাতের স্টার্টআপ ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি হবে ব্যাপক সম্ভাবনার দরজা।
এফটিএ স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের কী ধরনের লাভ হতে পারে— এমন প্রশ্নের উত্তরে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে-পরে মিলিয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে এসব শুল্ক থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, যা রফতানি খাতের জন্য বড় সুযোগ।”
তিনি বলেন, “এই অতিরিক্ত শুল্কের কারণে আমাদের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাত রপ্তানিতে ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। যদি এফটিএ না হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্থায়ী শুল্ক স্থগিতাদেশের সময়সীমা শেষ হয়, তাহলে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের ৫২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে। এর ফলে তৈরি পোশাক শিল্পে ধস নামতে পারে এবং উৎপাদন ও শ্রমিক নিয়েও সংকট তৈরি হতে পারে।”
ওমর ফারুক আরও বলেন, “এফটিএর মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হবে। এতে পারস্পরিক বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। যেহেতু উভয় দেশ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আলোচনা করছে, আমরা আশাবাদী যে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে। এটি অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার মতো উদ্যোগ।”
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন
- ১১'শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিবে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন
- এক বহুজাতিকের ধাক্কায়ই কেঁপে উঠল শেয়ারবাজার
- ভারতে ঢাবির দুই ছাত্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়, ক্ষোভ
- সাত কোম্পানিতে বিনিয়োগ বেড়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের
- দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে ১৪ কোম্পানি
- ঢাবির হলে ধূমপায়ীদের সিট না দেওয়ার ঘোষণা; প্রশংসায় ভাসছেন প্রভোস্ট
- স্টক ডিভিডেন্ড পেল ৩ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ইপিএস প্রকাশ করার তারিখ জানাল ১৫ প্রতিষ্ঠান
- ডিএনসিসির শিক্ষাবৃত্তি পাবে ২ হাজার শিক্ষার্থী
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- শেয়ারবাজারে বড়দের দাপট, ছোটদের পিছুটান
- ২৬ জুলাই : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা