ঢাকা, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৭০ ভরি সোনা লুট, জড়িত চার জন পুলিশ

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ মে ১৮ ১৬:০৬:৩০
৭০ ভরি সোনা লুট, জড়িত চার জন পুলিশ

ডুয়া ডেস্ক: প্রায় আট মাস আগে ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭০ ভরি সোনা লুটের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—এই ঘটনায় জড়িত ছিলেন পুলিশের চার সদস্য।

এর মধ্যে তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন সরকার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান এবং কনস্টেবল আবু বকর। এছাড়া লুটের সময় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালামকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে সবাই কারাগারে আছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবি রমনা জোনের এসআই মো. ইরফান খান জানান, দীর্ঘ তদন্ত ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর সোনা লুটের ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি বলেন, “ঘটনায় এসআই রিপন-সহ মোট চার পুলিশ সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি।”

মামলার নথি, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম এক আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন। সঙ্গে ছিলেন তার খালা সাজিয়া সুলতানা এবং খালাতো বোন জিনাত সুলতানা। সেদিন উড়োজাহাজে করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তারা।

পুরান ঢাকার বংশালে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সাইফুল একটি উবার প্রাইভেট কার বুক করেন। গাড়িটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে মগবাজারের দিকে যাচ্ছিল। তবে টোল প্লাজা পার হওয়ার পরপরই তাদের পথ রোধ করে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস, যাতে পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল।

সেই মাইক্রোবাস থেকে চারজন ব্যক্তি নেমে এসে নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয় এবং মুহূর্তের মধ্যে সাইফুলকে হাতকড়া পরিয়ে দেন। এরপর গাড়িতে থাকা তিনজনকেই ওই মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। ওই মাইক্রোবাসটির জানালায় কালো গ্লাস থাকায় বাইরে থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।

ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলামের ভাষ্যমতে, কালো রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার পরই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। মারধরের পাশাপাশি তাদের কাছে থাকা সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওইসময় মাদক রাখার মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেওয়া এবং গুলি করে হত্যার ভয় দেখানো হয়। পরে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় তাদের ফেলে রেখে পালিয়ে যায় লুটকারীরা।

ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর, তবে সাইফুল ইসলাম মামলা করেন বেশ দেরিতে—চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, “ভয়েই এতদিন মামলা করিনি। পরে আত্মীয়-স্বজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিই।”

মামলার নথি ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলা করার পরদিনই পুলিশ মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ মার্চ আটক করা হয় কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে। গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।

মিজানুর রহমানের জবানবন্দিতে উঠে আসে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রিপন সরকারের নাম, যিনি এই লুটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। পরে আরও তদন্তে যুক্ত হয় কনস্টেবল আবু বকরের নাম। ডিবি পুলিশ এই দুজনকেও গ্রেপ্তার করে।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. ইরফান খান জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুর ও সালামকে শনাক্ত করা হয়। এরপর মিজানুরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও দুই পুলিশ সদস্যকে ধরা হয়। এ ঘটনায় জড়িত আরেক কনস্টেবল হানিফ এখনও পলাতক, তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত