ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

ডুয়া নিউজ: গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন একটি আদালত। তাকে একমাস আগেই আটক করা হয়েছিল। ৩০ বছর বয়সী মাহমুদ খলিল যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, অর্থাৎ তিনি আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী। তার বিরুদ্ধে এর আগের কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। এর পরেও তাকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার কথা বলা হল।
কারাগার থেকে এক চিঠিতে মাহমুদ খলিল লিখেছেন, “ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার একটি অভিবাসন আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, খলিলের উপস্থিতি আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতিগত স্বার্থের বিরুদ্ধে।”
তবে আদালতের রায় মানেই এই নয় যে মাহমুদ খলিলকে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে। বিচারক তার আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, যাতে তারা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।
মাহমুদ খলিল গত ৮ মার্চ থেকে লুইজিয়ানা ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। তার মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গ্রেপ্তারের দিন অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার জন্যই তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম পরিচিত মুখ মাহমুদ খলিল। ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৫২ সালের যে আইনে তাকে আটক করেছে, সেই আইনে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, আমেরিকায় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি যদি দেশটির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হয়, তাহলে সরকার তাকে আমেরিকা ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দিতে পারবে।
বিচারক জানিয়েছেন, “মাহমুদ খলিলের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যে কারণ দেখিয়েছে, তা যুক্তিসংগত। ফলে মাহমুদ খলিলকে বহিষ্কারের পথে হাঁটতে ট্রাম্প প্রশাসনের কোনও বাধা নেই।”
আদালতের রায়ের পর এতদিন ধরে নীরব থেকে আসা মাহমুদ খলিল বলেন, “আপনি নিজেই আগের শুনানিতে বলেছিলেন, এই আদালতের কাছে মৌলিক সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। কিন্তু আজকে আমরা যা দেখলাম, তাতে স্পষ্টতই এই নীতিগুলির কোনওটিই আজ ছিল না। এমনকি, এই পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও এগুলো নেই। ঠিক এই কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন আমাকে আমার পরিবার থেকে এক হাজার মাইল দূরের এই আদালতে পাঠিয়েছে।”
মানবাধিকার সংগঠন ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ (এসিএলইউ) আদালতের রায়কে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি নথি আদালতে দাখিলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এই রায় এসেছে। অথচ নথিটিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি চিঠি ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ ছিল না। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, মাহমুদ খলিল কোনো অপরাধ করেননি, বরং তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কারণে তাকে টার্গেট করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে মাহমুদ খলিলের কর্মকাণ্ড ছিল ‘আইনসঙ্গত’। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম শুক্রবার আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশুনার করার জন্য ভিসা বা গ্রিন কার্ড পাওয়া একপ্রকার সৌভাগ্য। কিন্তু যখন আপনি সহিংসতাকে উসকে দেবেন, সন্ত্রাসীদের প্রশংসা ও সমর্থন করবেন বা ইহুদিদের হয়রানির মুখে ফেলবেন- তখন আপনার আর এখানে থাকার কোনও অধিকার নেই। বিদায়!”
মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বারবার বলছে, আদালতে মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষ বা সহিংসতা বিষয়ক কোনও প্রমাণ এখনও উপস্থাপন করা হয়নি। তার আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডের হাউট এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে যা চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মাহমুদ খলিলের অধিকারের পক্ষে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। এই মামলাটির আবারও শুনানি হবে বলে তারা আশা করছেন।
হোয়াইট হাউজের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি টেইলর রজার্স এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৈদেশিক নীতির দিক থেকে ক্ষতিকর-তাদেরকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে।”
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না বস্ত্র খাতের ১৩ কোম্পানি
- ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৭ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কোম্পানির বাজিমাত
- রবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের মুখে গ্রামীণফোন
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
- টানা পতনেও শেয়ারবাজারে পুনরুজ্জীবনের সংকেত
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে: বাগছাস
- শেখ সেলিমের ২১টি বিও অ্যাকাউন্ট ও ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
- চলতি সপ্তাহে ৬ কোম্পানির ডিভিডেন্ড অনুমোদন
- ঢাবি ছাত্রদলের ব্যতিক্রমধর্মী মিছিল, শুধু হাততালি