ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ন্ত্রণ ও দেশীয় মাছের নিরাপত্তা জরুরি: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

২০২৫ নভেম্বর ২৮ ১৭:১৪:৫০

অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ন্ত্রণ ও দেশীয় মাছের নিরাপত্তা জরুরি: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাছ চাষে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ফিড ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ভবিষ্যতে মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তাই এখনই এসব বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা জরুরি। একোয়াকালচারের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফরিদা আখতার।

দ্বিতীয় দিনের বিষয় ছিল ‘জাতীয় প্রাণী সম্পদ সপ্তাহ: পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণি ও মৎস্য খাত’। বিএজেএফ’র সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সভাপতিত্বে তিনি আরও বলেন, মানুষ খাদ্য খায় বেঁচে থাকার জন্য, কিন্তু সেই খাদ্য যেন রোগের উৎস না হয়।

ফরিদা আখতার বলেন, দেশের সামগ্রিক পুষ্টিচিত্র নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গড় হিসাবের ওপর নির্ভর করা বিপজ্জনক। ধনী মানুষের আয় দিয়ে গরীব মানুষকে বিচার করা ঠিক হবে না। কৃষিতে ভর্তুকির কথা শুনি, কিন্তু প্রাণি ও মৎস্য সম্পদে ভর্তুকির অভাব রয়েছে। এই খাতেও যথাযথ ভর্তুকি প্রদান জরুরি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশীয় প্রাণিসম্পদ কেবল উৎপাদনশীলতার জন্য নয়, গ্রামীণ খাদ্য চাহিদা, সংরক্ষণ সুবিধা, নারী কর্মসংস্থান ও কৃষির ঐতিহ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে শিল্প হিসেবে দেখা হলেও উৎপাদনের ৭০–৮০ শতাংশ এখনও গ্রামীণ সাধারণ মানুষের হাতে। শিল্পায়ন প্রয়োজন, তবে দেশীয় প্রজাতির সুরক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। সংকর জাত তৈরির সময় দেশীয় মৌল বৈশিষ্ট্য হারানো যাবে না, এ বিষয়ে তিনি সতর্কবার্তা দেন।

ফরিদা আখতার গ্রামীণ খাদ্যব্যবস্থার বৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্বও তুলে ধরেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে দেশীয় মাছের স্বাদ অত্যন্ত ভালো হলেও অনেক সুনামগঞ্জবাসী এখন একোয়াকালচারের পাঙ্গাস খেতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের এসব বাস্তব তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, খাদ্যে ফোর্টিফিকেশনকে একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখা উচিত নয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎপাদিত খাবারের পুষ্টিগুণ বেশি। কীটনাশকের ব্যবহার কমানো না গেলে খাদ্য ভবিষ্যতে রোগের উৎসে পরিণত হতে পারে। দেশীয় মাছ, মাংস ও প্রাণিসম্পদ বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ, যা রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। বিশ্বের অনেক দেশের প্রাণিসম্পদ বিলুপ্ত হলেও আমাদের দেশে অনেক প্রজাতি টিকে আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, নদীর মাছ কমার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা চাষের ক্ষেত্রে কীটনাশকের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে আনার কৌশল বাস্তবায়ন করছি। নিরাপদ মাছ উৎপাদন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, বিএজেএফ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে রাজনৈতিক ও নীতিগত অঙ্গীকার চাই। নদীর মাছ ফিরিয়ে আনা, অযাচিক বালাইনাশক ব্যবহার কমানো, চাষের মাছের গুণগত মান রক্ষা এবং খামারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও সুনীল অর্থনীতি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প পরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেন, মজুদ জরিপ, জেলেদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ, আধুনিক মনিটরিং ব্যবস্থা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ফলে বাংলাদেশ সুনীল অর্থনীতির বাণিজ্যিক ও টেকসই বিকাশের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। মেরিন স্পেশিয়াল প্ল্যানিং, টেকসই আহরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সমুদ্রের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন— এই চার খাতে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে।

কেএমএ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত