ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

নতুন ভূমি আইন: যেসব নথি না থাকলে হারাতে হবে জমি

২০২৫ নভেম্বর ২৮ ১৪:৫৩:৪৪

নতুন ভূমি আইন: যেসব নথি না থাকলে হারাতে হবে জমি

সরকার ফারাবী: ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, মামলা, এবং বছরের পর বছর চলতে থাকা পারিবারিক বিভাজনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো যথাযথ দলিলপত্রের ঘাটতি। নতুন ভূমি আইনের প্রেক্ষাপটে এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কারও কাছে পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র না থাকলে নিজের জমির ওপর অধিকার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই জমির মালিকানা, দখল এবং হস্তান্তর–সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় নথিগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি।

জমির দখল ও মালিকানা নিশ্চিত করতে নিচের গুরুত্বপূর্ণ আটটি প্রমাণপত্র অবশ্যই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন-

১. জমির দলিল ও বায়া দলিল

জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। রেজিস্ট্রার অফিসে ক্রেতা–বিক্রেতার স্বাক্ষর, সাক্ষীর সই এবং রেজিস্ট্রারের সিলমোহরযুক্ত দলিলই জমির মূল দলিল হিসেবে গণ্য হয়। পূর্বের দলিলগুলোকে বলা হয় বায়া দলিল। চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিলের কপি সংগ্রহ করা যায়।

২. পর্চা ও খতিয়ান

জরিপের মাধ্যমে তৈরি ভূমির সরকারি রেকর্ড হলো খতিয়ান। নাগরিকরা যখন এই রেকর্ডের অনুলিপি সংগ্রহ করেন, সেটিই পর্চা নামে পরিচিত। খতিয়ান জমির মালিকানার সরকারি স্বীকৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৩. দাখিলা (খাজনা প্রদানের রশিদ)

ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের পর তহসিল অফিস যে রশিদ দেয়, সেটাই দাখিলা। জমি বিক্রির সময় এটি বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হয়। বর্তমানে খাজনা মওকুফ থাকলেও অল্প ফি দিয়ে দাখিলা সংগ্রহ সম্ভব।

৪. ওয়ারিশ সনদ ও সাকসেসন সার্টিফিকেট

উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পেতে হলে ওয়ারিশ সনদ প্রয়োজন, যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র বা সিটি মেয়র ইস্যু করেন। আদালত থেকে ইস্যুকৃত উত্তরাধিকার সনদকে সাকসেসন সার্টিফিকেট বলা হয়।

৫. মিউটেশন (নামজারি) কপি

জমির মালিকানা পরিবর্তনের রেকর্ড হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি করা হয়। দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে মালিকানা পরিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে মিউটেশন কপিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল ধরা হয়।

৬. আদালতের রায় ও ডিক্রি

যদি জমি সংক্রান্ত বিরোধ আদালত সমাধান করে, তবে সেই রায় বা ডিক্রিই হয় মালিকানা নির্ধারণের চূড়ান্ত প্রমাণ। ভবিষ্যৎ বিরোধ এড়াতে আদালতের রায় অত্যন্ত শক্তিশালী দলিল।

৭. মৌজা ম্যাপ

জমির অবস্থান ও সীমানা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে মৌজা ম্যাপ অত্যন্ত কার্যকর। জেলা প্রশাসকের অফিসে এই ম্যাপ সংরক্ষিত থাকে এবং নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে তা সংগ্রহ করা যায়।

৮. জমির দখল ও ব্যবহারের প্রমাণ

জমির দখলের আলাদা কোনো সরকারি কাগজ না থাকলেও দাখিলা বা খাজনা রশিদ দখল প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আইন শুধু বৈধ মালিকানার ভিত্তিতে জমি ব্যবহারের স্বীকৃতি দেয় জোরপূর্বক দখল কখনো বৈধ নয়।

ভূমি আইনের বর্তমান বাস্তবতায় নিজের জমির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য এই আটটি নথি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ জরুরি। এতে ভুলচুক হলে শুধু সম্পত্তি নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্মের অর্জিত সম্পদও হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই এখনই যথাযথ দলিলপত্র নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রার দপ্তর বা অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত