ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্প রেড জোন: আপনার অঞ্চলও কী আছে এর মধ্যে? দেখুন তালিকা

২০২৫ নভেম্বর ২৮ ১৪:৩২:৪০

ভূমিকম্প রেড জোন: আপনার অঞ্চলও কী আছে এর মধ্যে? দেখুন তালিকা

সরকার ফারাবী: বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মূল্যায়ন করে দেশটিকে তিনটি পৃথক জোনে ভাগ করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ‘জোন–১’, মাঝারি ঝুঁকির অঞ্চল ‘জোন–২’, আর তুলনামূলক নিরাপদ বা নিম্নঝুঁকির অঞ্চল ‘জোন–৩’ হিসেবে চিহ্নিত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত ভূমিকম্প–সংবেদনশীলতার মানচিত্রে এসব এলাকা স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে।

মানচিত্রের বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জেলা জোন–১–এর তালিকায় রয়েছে, যেখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি সর্বোচ্চ। সক্রিয় ফল্ট লাইন ও প্লেট বাউন্ডারির কাছে অবস্থিত অঞ্চলে কম্পনের সম্ভাবনা সাধারণত বেশি থাকে। সেই হিসেবে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের মোট নয়টি জেলা, টাঙ্গাইল–গাজীপুর–নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি–রাঙামাটির বড় এলাকা উচ্চঝুঁকিতে গণ্য করা হয়। এর বিপরীতে খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালী অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল অর্থাৎ জোন–৩ এর আওতায়।

১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত পাঁচ দফা উল্লেখযোগ্য মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এসব কম্পনের উৎসস্থল ছিল প্রধানত সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার অঞ্চল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব এলাকাই ভবিষ্যতে আরও বড় কম্পনের ঝুঁকি বহন করে। ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আসাম ও মেঘালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় সিলেট–ময়মনসিংহ এলাকায় উচ্চঝুঁকি দীর্ঘদিনের।

ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে জানা যায়, বাংলাদেশের চারপাশে অন্তত পাঁচটি সম্ভাব্য ভূমিকম্প–উৎপত্তিস্থল রয়েছে। প্লেট বাউন্ডারি–১ মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত; প্লেট বাউন্ডারি–২ নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত; আর প্লেট বাউন্ডারি–৩ সিলেট হয়ে ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেছে। পাশাপাশি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট অঞ্চলে ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট উভয়ই ভূমিকম্পের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বিবেচিত।

রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় মোট প্রায় ২১ লাখ ভবন রয়েছে। এর প্রায় ১৫ লাখ ভবনই দ্বিতীয় তলা বা তার নিচের, ফলে এসব ভবনের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। তবে বাকি প্রায় ৬ লাখ বহুতল ভবন, যেগুলোর প্রতিটিই উচ্চঝুঁকির তালিকায়। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে পড়লে ভয়াবহ প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের দাবি—ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো সংস্কার করে এগুলোকে ভূমিকম্প–সহনশীল করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পকে বিশ্বের সবচেয়ে অনিশ্চিত ও বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করেন। কম্পন প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও আগাম সতর্কতা, পূর্বাভাস এবং প্রস্তুতি ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমাতে পারে। উন্নত দেশগুলো বিশেষ করে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রযুক্তি ও গবেষণায় বিপুল বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।

বুয়েটের অধ্যাপক ডা. মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, বাংলাদেশ বহুদিন ধরেই ভূমিকম্পঝুঁকিতে রয়েছে। সাম্প্রতিক ৫.৭ মাত্রার ভূকম্পনই এর প্রতিফলন। তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে মাঝারি মাত্রার কম্পনেই যখন ভবনের ক্ষতি হচ্ছে, তখন বড় ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।” রাজধানীতে বিল্ডিং কোড মানা ছাড়াই যেসব ভবন নির্মিত হচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, এ বিষয়ে সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ট্যাগ: ভূমিকম্প আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রাকৃতিক দুর্যোগ Earthquake Natural Disaster মধুপুর ফল্ট ডাউকি ফল্ট ভূমিকম্প পূর্বাভাস Madhupur Fault ভূমিকম্প মানচিত্র seismic activity earthquake map ভূমিকম্প ঝুঁকি Earthquake Risk ভূমিকম্প প্রস্তুতি Earthquake preparedness ভূমিকম্প গবেষণা জোন ১ এলাকা সিলেট ভূমিকম্প Bangladesh Earthquake Zones Zone 1 Areas Sylhet Earthquake Dhaka Building Risk Fault Lines Dawki Fault Plate Boundary Disaster Risk Bangladesh Seismic Hazard Bangladesh Safety RAJUK Buildings Bangladesh Fault Zone Chittagong Hill Tracts Cox’s Bazar Earthquake Geological Risk High-Risk Buildings Earthquake Forecast Bangladesh Seismology বাংলাদেশ ভূমিকম্প জোন ঢাকা ভবন ঝুঁকি প্লেট বাউন্ডারি বাংলাদেশের দুর্যোগ ঢাকার ঝুঁকি রাজউক ভবন বাংলাদেশ নিরাপত্তা ময়মনসিংহ সিলেট ঝুঁকি খাগড়াছড়ি রাঙামাটি কক্সবাজার কম্পন বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বহুতল ভবন ঝুঁকি ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত