ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

দেশের অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে: বিসিআই সভাপতি 

২০২৫ নভেম্বর ২৭ ১৯:৪১:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক আর্থিক পরিবেশ ক্রমেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্প মালিকেরা। তাদের দাবি, নীতিনির্ধারণে ব্যবসায়ী সমাজের মতামতকে অগ্রাহ্য করার ফলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনা সভায় এ চিত্র উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘রক্তক্ষরণ’-এর সঙ্গে তুলনা করে সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন,দেশেরঅর্থনীতিররক্তক্ষরণহচ্ছে।আমরাবারবারসতর্ককরলেওসরকারশুনছেনা।ব্যবসায়ীদেরপ্রতিতাদেরকোনোকেয়ারনেই।

তিনি জানান, ২০২২ সালের পর থেকে জ্বালানি সংকট তীব্রভাবে বেড়েছে। জ্বালানি মূল্য বাড়ানো সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে অনেক উদ্যোক্তা জীবিকা বাঁচাতে ঢাকায় এসে অটোরিকশা (টেসলা) চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। তার দাবি, রাজধানীর জনসংখ্যা এখন সাড়ে তিন কোটিতে পৌঁছেছে।

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকেও তিনি ‘ভয়াবহ সংকেত’ হিসেবে তুলে ধরেন। তার ভাষায়, যখন খেলাপি ঋণ ১৭ শতাংশ ছিল, তখন আইএমএফ বাংলাদেশকে ‘মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ’ বলেছিল। এখন ঋণখেলাপির হার ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন,অবস্থায়আইএমএফআমাদেরকোনঝুঁকিরক্যাটাগরিতেফেলবে?”পারভেজ আরও বলেন, খেলাপি ঋণ বিস্ফোরণের ফলে ঋণ ব্যয় আরও বাড়বে এবং উৎপাদনমুখী খাতে ঋণপ্রবাহ আরও কমে যাবে।

এ দিনে পিআরআইয়ের সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংস্করণের এমএমআই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে উল্লেখ করা হয়, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমায় প্রাথমিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত মিললেও বিনিয়োগ কমে যাওয়া, বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির মন্থরতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা পুনরুদ্ধারকে নাজুক করে তুলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনাদায়ী ঋণ ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এনপিএল এখন ‘বিষাক্ত চাপ’ তৈরি করছে।

পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার বলেন, অর্থনীতির গতি কমলেও কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে আরও উদার নীতিমালা গ্রহণ জরুরি। তার মতে, পাল্টা শুল্কের প্রভাবে রপ্তানি কিছুটা কমলেও বাংলাদেশ এখনো ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে।

সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, এনপিএল সংকট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সম্পূর্ণ সমন্বিত সমাধান কাঠামো এ মুহূর্তে প্রয়োজন। তিনি জানান, ৬.৪ ট্রিলিয়ন টাকার অনাদায়ী ঋণের বোঝা নিয়ে ব্যাংকগুলো টিকে থাকতে পারবে না। উচ্চ সুদের হার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য নির্ভরতা ও উৎপাদন খাতে ঋণহ্রাসের ফলে দেশ একটি ‘উচ্চ সুদ, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও নিম্ন বিনিয়োগের’ দুষ্টচক্রে আটকে যাচ্ছে।

আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা করনীতি সংস্কার, রপ্তানি বৈচিত্র্য, দক্ষতা উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন। তাদের মতে, সমন্বিত নীতি ও দ্রুত পদক্ষেপ ছাড়া টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত