ঢাকা, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আইসিবিকে নতুন তহবিল দেবে না সরকার, ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন

২০২৫ নভেম্বর ২১ ২০:৩২:৪৪

আইসিবিকে নতুন তহবিল দেবে না সরকার, ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) নতুন করে আর কোনো ঋণপরিশোধ তহবিল পাবে না—অর্থ মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলা লোকসান পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে সংস্থাটির জন্য।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আসে আইসিবির অতীত কয়েক বছরের আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে, বিশেষত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ১২ হাজার কোটি টাকার লোকসান প্রকাশের পর। গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেয়, যার দুই-তৃতীয়াংশ ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত হলেও বাকি অংশ বিনিয়োগ খাতে যায়।

আইসিবি আরও ১৩ হাজার কোটি টাকার নতুন তহবিল চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল, যা সংস্থাটির আর্থিক পুনরুদ্ধারের ‘শেষ ভরসা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে—নতুন অর্থ দেওয়া হবে না; বরং বাজারে বিনিয়োগ করে আইসিবিকেই আয়ের পথ খুঁজতে হবে।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট—আর কোনো তহবিল দেওয়া হবে না। এর আগে ৩০০০ কোটি টাকা আসার পর আমরা প্রতিটি ঋণদাতার কাছে দায় মেটাতে পেরেছিলাম। তবে নতুন ঋণ সহায়তা বন্ধ হওয়ায় আমাদের সামনে পথ আরও কঠিন হয়ে গেল।”

তিনি জানান, আইসিবি ইতোমধ্যে প্রতি মাসে ৯০০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করছে—যা আগের সময়ের দ্বিগুণ। বাজার থেকে যে অর্থ পাওয়া যায়, তা দিয়ে এই চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরকারি তহবিল না পাওয়ায় আইসিবি এখন নিজেদের সঞ্চিত আয়, বাজার থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড এবং পুরাতন বিনিয়োগ থেকে পাওয়া রিটার্ন দিয়েই ঋণ পরিশোধের বোঝা টানবে। পরিস্থিতি এমন যে, ভবিষ্যতে আইসিবির নতুন তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

তবে আইসিবি কর্তৃপক্ষের দাবি—পূর্ববর্তী বোর্ডের দুর্ব্যবস্থাপনাই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। পুরোনো ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও অপ্রয়োজনীয় সাবসিডিয়ারি খরচে প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। নতুন বোর্ড বলছে—এখন তারা নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে কোনো অর্থ আর অপব্যবহার হবে না।

আইসিবির বড় সমস্যা হলো ব্যক্তিখাত বা সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় অত্যন্ত কম সুদ হারে সরকারের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া উচ্চ সুদের ঋণের বোঝাও রয়েছে। এতে সুদ পরিশোধ করতেই আইসিবির বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

নতুন তহবিল না পেয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আইসিবিকে এখন বাজারমুখী বিনিয়োগ, ব্যয় সংকোচন ও সাবসিডিয়ারিগুলোর কার্যক্রম পুনর্গঠনের মাধ্যমে টিকে থাকতে হবে।

আইসিবিরি এমডি বলেন, “আমরা চেষ্টা করবো নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজতে। সরকার দেখবে আমরা কীভাবে এগোই। এরপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।”

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত