ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২

গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয়, সংসদ দরকার: সালাহউদ্দিন

২০২৫ নভেম্বর ১৪ ১৯:৫৪:২৮

গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয়, সংসদ দরকার: সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব যাতে খর্ব না হয়, সে জন্য আমরা কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, কোনো রকমের জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করতে দেব না।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহবাগে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত মৌন মিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গণভোটের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করা যাবে না। সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। তার জন্য অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে।

'নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ' শীর্ষক এ মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজক নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ সিদ্ধান্ত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ।

জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে সই হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে।

জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি সোচ্চার থাকবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষুণ্ণ হোক, তা আমরা চাই না। সে জন্য কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ আমরা করতে দেব না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, দেশে একটি রাজনৈতিক দল, যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চায়, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছেন। তারা চায়, এ দেশের নারীরা অন্দরমহলে বন্দী থাক। দেশের অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাক, যেন এই দেশে নারীর অগ্রগতি না হয়।

নারীর কর্মঘণ্টা কমানো হলে কর্মসংস্থান কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা।

সালাহউদ্দিন বলেন, নারীরা তাদের কর্মস্থলে সম্মানের সঙ্গে চাকরি করবে এবং সঠিক কর্মসংস্থানের জন্য কর্মঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করবে এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করবে। নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক। আমরা চাই, নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হোক। যদি কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে যারা অফিস–আদালত, কলকারখানা পরিচালনা করেন, তারা নারীদের চাকরি দিতে চাইবেন না। ফলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সারা দেশে যে নারী নির্যাতন হচ্ছে বা অতীতে হয়েছে, তার কোনো কার্যকর প্রতিবাদ এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। কিছু কিছু আইন প্রণয়ন হয়। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইন কঠিন হলে সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। আইনের ফাঁকফোকরে নারী নির্যাতনকারীরা, ধর্ষকরা বেরিয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহার করে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেদিকেও আমরা নজর দেব।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি জানান, তারা ভেবেছিলেন, গত ১৭ বছর নারীরা যেভাবে খুন-ধর্ষণের শিকার হতো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। নারীরা তাদের মর্যাদা ফিরে পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে আজ আবার নারীরা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছেন। নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই অধিকার আদায়ে নারীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মর্যাদা ফিরে পেতে নারীদের সমস্বরে আওয়াজ দিতে হবে।

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শিরীন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, সানজিদা ইসলাম তুলি, রেহানা আক্তার শিরীন প্রমুখ।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত