ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২
আসামে বহুবিবাহ নিষিদ্ধের নতুন আইন: সমতা নাকি বৈষম্য?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা রোববার গৌহাটিতে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্যে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করতে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে। নতুন এই আইন বহুবিবাহকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবে এবং সর্বাধিক সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এই ঘোষণার পর রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন প্রশ্নও উঠেছে আইন কি সত্যিই সমতা আনার উদ্দেশ্য রাখে, নাকি এটি বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে?
বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, এই আইন আসামের তফসিলি উপজাতি (ST) সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না এবং রাজ্যের ছয়টি নির্ধারিত উপজাতি এলাকায় তা অবিলম্বে কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, ‘আইন সবার জন্য প্রযোজ্য, তবে আদিবাসীদের জন্য নয়।’ এছাড়া, ২০০৫ সালের আগে নির্ধারিত এলাকায় বসবাস করা সংখ্যালঘু মুসলমানদের ক্ষেত্রেও এই আইনের ব্যাখ্যা প্রযোজ্য হবে না। এই ব্যতিক্রমমূলক ধারা সমাজের বিভিন্ন অংশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
আইনটি নারী অধিকার ও সামাজিক সংস্কারের নামে উপস্থাপিত হলেও সমালোচকরা মনে করছেন, এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য অন্য। আসামে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রশ্ন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ২০০১ থেকে ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য তুলে ধরে বলেন, হিন্দু জনসংখ্যার বৃদ্ধি কমেছে, যেখানে মুসলমান জনসংখ্যা বিভিন্ন ব্লকে বেড়েছে। ফলে অনেকেই নতুন আইনকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের ছাড়ের বিধান আইনকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং প্রশাসনিক প্রয়োগে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। আইন প্রয়োগে একজন নাগরিকের জন্য বিধান একরকম, অন্যজনের জন্য ভিন্ন এই বৈষম্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এটি ‘সবার জন্য আইন’, তখন এই ব্যতিক্রম কতটা সাংবিধানিক, তা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
আসাম সরকার দাবি করছে, এটি ‘সামাজিক শুদ্ধিকরণ’-এর অংশ। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর নজরদারি বাড়বে এবং পারিবারিক বিষয়ে সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হবে। তারা বলছেন, ‘নারীর অধিকার রক্ষার নামে যদি সরকার নাগরিকদের ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ে ভাগ করে, তা ন্যায়বিচার নয়, বরং বৈষম্য।’
বিশ্বশর্মা আরও জানান, রাজ্যে ফেব্রুয়ারির মধ্যে অস্ত্র লাইসেন্স অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং জমি বিক্রির ওপর নতুন নিয়ন্ত্রণ চালু হবে। প্রশাসনিক এই পদক্ষেপগুলিকে অনেকে কঠোর রাষ্ট্রনীতির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই আইন শুধুমাত্র বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্য নয়, বরং সামাজিক মানচিত্র পুনর্লিখনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
এছাড়া জনসংখ্যা ও নির্বাচনী রাজনীতির প্রভাবও অনস্বীকার্য। আসামের সাধারণ মানুষ এখন এই নতুন আইনের প্রভাব, এর বৈষম্য ও প্রশাসনিক প্রয়োগের সীমা নিয়ে আলোচনা করছে। নজর এখন রাজ্যপালের সিলমোহরের দিকে।
ইএইচপি
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- নতুন মার্জিন নীতিতে কারা সুবিধা পাবেন, কারা হারাবেন?
- শেয়ারবাজারই হতে পারে ওষুধ শিল্পের নতুন প্রাণশক্তি: ডিএসই চেয়ারম্যান
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: কবে, কখন, কোথায়-যেভবে দেখবেন সরাসরি(LIVE)
- শেয়ারবাজারে নতুন মার্জিন বিধিমালা জারি করল বিএসইসি
- নিউজিল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি দেখুন(LIVE)
- নিয়ন্ত্রক সংস্থার টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত ব্যাংক ও শেয়ারবাজার
- বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের ৬ কোম্পানির শেয়ারে ঝলক
- পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্তা
- ‘নো ডিভিডেন্ড’- এর বদনাম ঘুচাল বস্ত্র খাতের তিন কোম্পানি
- পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন? জানালেন গভর্নর
- সাপোর্টের রেকর্ড মুনাফা, ১৫ বছরে সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড
- চলতি সপ্তাহে আসছে ৯ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ব্রাজিল বনাম হন্ডুরাস: ৭ গোলে শেষ হলো ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- বিএনপির মনোনয়নে শেয়ারবাজারে ঝড় তুলেছে তিন কোম্পানি
- পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণা নিয়ে যা জানালেন অর্থ উপদেষ্টা