ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

রাশিয়ায় বৈধ চাকরির প্রলোভনে বাংলাদেশিরা ইউক্রেনে যুদ্ধবলের ফাঁদে      

২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৪:১১:৪৯








রাশিয়ায় বৈধ চাকরির প্রলোভনে বাংলাদেশিরা ইউক্রেনে যুদ্ধবলের ফাঁদে




 
 



 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :রাশিয়ায় বৈধভাবে চাকরির উদ্দেশ্যে যাওয়া অন্তত ১০ জন বাংলাদেশি এখন বাধ্য হচ্ছেন ইউক্রেনের যুদ্ধে অংশ নিতে। তাদের পরিবার মরিয়াদ্বারা স্বজনদের নিরাপদ দেশে ফেরানোর দাবিতে চাপ দিচ্ছে। বিষয়টি সামনে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সর্বশেষ প্রতিবেদনে, যার শিরোনাম ‘Promises Written in Blood: How Legal Migration Turned into Forced Recruitment in the Russia-Ukraine War’।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে নিখোঁজ বা আটকে পড়া বাংলাদেশির সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি হতে পারে, তবে সঠিক পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। দালালচক্ররা উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শ্রমিকদের রাশিয়ায় পাঠায়। অনেকেই তেল, নির্মাণ বা পরিবহন খাতে কাজের আশায় যান, কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, তাদের কাছে অন্তত ১০টি পরিবার আবেদন করেছে প্রিয়জনকে দেশে ফেরানোর জন্য। “তারা বৈধ ভিসায় রাশিয়া গিয়েছিলেন, কিন্তু প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগই ৭–৮ লাখ টাকা খরচ করেছেন, এবং এতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দালালচক্র দু’পক্ষই জড়িত,” তিনি বলেন।

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বাগেরহাটের অয়ন মণ্ডল ও কুমিল্লার অমিত বড়ুয়ার ঘটনা। অয়ন শেষবার তাঁর পরিবারকে জানিয়েছিলেন, তাকে ইউক্রেন সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অমিত বড়ুয়া রুশ সেনা পোশাকে দেখা গেছে, এরপর তিনি নিখোঁজ। ময়মনসিংহের আলী হোসেনের ছেলে আফজাল হোসেনও ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন; পরে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়, মাইন বিস্ফোরণে আহত হন এবং মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরেছেন।

অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু জানায়, অনেককে সরাসরি রাশিয়া নয়, সৌদি আরব হয়ে ট্যুরিস্ট বা ওমরাহ ভিসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং পরে যুদ্ধের ময়দানে পাঠানো হচ্ছে। রামরুর নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, “রাশিয়ায় কতজন বাংলাদেশি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে, কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন—সরকারি উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানবপাচারের ফাঁদে পড়া কয়েকজন বাংলাদেশি ইতিমধ্যেই শনাক্ত হয়েছেন এবং রাশিয়ায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত একজন দালাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে এএফপি জানিয়েছিল, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে গিয়ে ২২ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। মস্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে অন্তত ডজনখানেক পরিবার এখনও নিখোঁজদের খোঁজে আবেদন করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় অনেকেই প্রতারণার মাধ্যমে সেখানে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে, এবং বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।”

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত