ঢাকা, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

অর্থনীতির গতি ফেরাতে এসএমই খাতে বড় সংস্কারের উদ্যোগ

২০২৫ নভেম্বর ০১ ১৬:৩৪:০৪

অর্থনীতির গতি ফেরাতে এসএমই খাতে বড় সংস্কারের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত করতে সম্প্রতি চারটি বৈঠক করেছে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি। এসব বৈঠকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় জানায়, এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা।

ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত সিদ্ধান্ত

এসএমই উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে-

১) বৈদেশিক অর্ডার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ১০ শতাংশ ব্যাংকে জমা রাখার বাধ্যবাধকতা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম তিন হাজার মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দের প্রস্তাব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকের সিদ্ধান্ত

৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

১) নতুন আর্থিক পণ্য উদ্ভাবন: এসএমই ফাউন্ডেশন ও ব্যাংকের বিশেষ কর্মসূচি বিভাগ যৌথভাবে কর্মশালা আয়োজন করে উদ্যোক্তাবান্ধব আর্থিক পণ্য তৈরির উদ্যোগ নেবে।

২) নীতিমালার কার্যকারিতা যাচাই: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মাস্টার সার্কুলারের কার্যকারিতা পারফরম্যান্স মূল্যায়নের মাধ্যমে যাচাই করা হবে।

৩) ইসেন্সবিহীন ঋণের সম্ভাবনা: বাণিজ্য লাইসেন্স ছাড়া সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হবে।

৪) সুদের হার পর্যালোচনা: পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচিকে আকর্ষণীয় করতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার সমন্বয়ের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।

পূর্ববর্তী বৈঠক ও আলোচনার সারসংক্ষেপ

২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রথম বৈঠকে এসএমই খাতের নানা চ্যালেঞ্জ অর্থপ্রদানে বিলম্ব, শুল্ক, লাইসেন্স ও ঋণসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।

২১ সেপ্টেম্বর এসএমই ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে আয়োজিত বৈঠকে উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাব শুনে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এর ধারাবাহিকতায় ৮ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তসমূহ

এসএমই খাতের উন্নয়নে বর্তমানে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নাধীন-

১) নমুনা ছাড়প্রক্রিয়া সহজ করতে এনবিআরের পর্যবেক্ষণ জোরদার।

২) ডিজিটাল মানিব্যাগের মাধ্যমে অর্থপ্রাপ্তিতে আইটি খাতের মতো সুবিধা প্রদানে নীতিমালা সংস্কার।

৩) অনলাইন বিক্রির অর্থ দ্রুত উদ্যোক্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে ব্যাংক ও এসএসএল কমার্সকে নির্দেশনা।

৪) অনলাইন রপ্তানিতে বি-টু-বি ও বি-টু-সি মডেল অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ।

৫) এসএমই নীতিমালা প্রচারে সচেতনতামূলক কর্মসূচি।

৬) উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বৈদেশিক মুদ্রা কার্ড চালুর প্রস্তাব।

৭) আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে এসএমই খাতবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশে বাণিজ্য ইনস্টিটিউটের উদ্যোগ।

৮) বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি SOP বাস্তবায়নে সমন্বয়।

৯) কৃষি-জৈব পণ্যের সনদ ইস্যু সমস্যার সমাধানে আলোচনা।

১০) ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া আগাম অর্থপ্রদানের সীমা বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ হিসাব থেকে পরিশোধ সীমা দ্বিগুণ করা।

১১) স্থানীয় বীমা কভারেজসহ উন্মুক্ত হিসাবের মাধ্যমে রপ্তানি লেনদেনের অনুমোদন।

১২) ব্যবসায়ীদের অর্থপ্রদানের পদ্ধতি সহজভাবে উপস্থাপন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাহচিত্র প্রকাশের উদ্যোগ।

শুল্ক জটিলতা নিরসনে পদক্ষেপ

২৮ আগস্টের বৈঠকে এনবিআর সিদ্ধান্ত নেয়, এখন থেকে আট অঙ্কের এইচএস কোডের প্রথম চার অঙ্ক মিলে গেলেই শুল্ক মূল্যায়ন সম্পন্ন হবে।

বিশেষ দূতের মন্তব্য

আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, এই সংস্কারগুলোর মূল উদ্দেশ্য অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অবদান বিশাল, কিন্তু তাদের কণ্ঠ অনেক সময় অশ্রুত থেকে যায়। সরকারকে এমন হতে হবে, যা সহায়ক বাধা নয়। অর্থায়ন থেকে সরবরাহব্যবস্থা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা সহজ করতে হবে।

এস/এফ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত