ঢাকা, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২

আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস

ইনজামামুল হক পার্থ
ইনজামামুল হক পার্থ

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ২৯ ১২:০৮:৪০

আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস

ইনজামামুল হক পার্থ: আজ ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এই দিনটি বিশ্বব্যাপী স্ট্রোক প্রতিরোধ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনযাত্রা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপের জন্য পালন করা হয়। স্ট্রোক একটি মারাত্মক মস্তিষ্কজনিত রোগ, যা দ্রুত চিকিৎসা না নিলে প্যারালাইসিস, স্থায়ী অক্ষমতা বা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

দিবসটির লক্ষ্য হলো জনগণকে স্ট্রোকের ঝুঁকি, উপসর্গ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানানো। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান এড়ানো এবং প্রয়োজনমতো চিকিৎসা নেওয়া হলে স্ট্রোকের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই স্ট্রোক দিবসের মধ্য দিয়ে সকলকে সচেতন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে দ্রুত চিকিৎসা ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

দেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা এবং স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শহর-গ্রামের মানুষ প্রায় সবাই এই রোগের ঝুঁকিতে। তবে স্ট্রোকের সঠিক চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দেশের অধিকাংশ জেলায় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে রোগীরা নানা সংকটের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা পেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। প্রতি মিনিটে প্রায় ১০ জন স্ট্রোকের কারণে মারা যান। ১০০ জন স্ট্রোক রোগীর প্রায় ৪৮ জনই উচ্চ রক্তচাপের শিকার। শিশুদের ক্ষেত্রেও স্ট্রোক একটি বড় সমস্যা; প্রতি লাখে ২ থেকে ১৩ জন শিশু স্ট্রোকের শিকার হয়। শিশুদের স্ট্রোকের অর্ধেক রক্তচলাচলের বাধার কারণে হয়, বাকি অর্ধেক রক্তনালী ছিঁড়ে রক্তক্ষরণজনিত। প্রতি বছর আক্রান্ত শিশুদের ১০-২৫ শতাংশ মারা যায়, এবং প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু বারবার স্ট্রোকের সম্মুখীন হয়। আক্রান্ত শিশুদের ৬৬ শতাংশের ক্ষেত্রে হাত-পায়ের দুর্বলতা, খিঁচুনি এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত দেখা দেয়।

দেশে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ২০১৯ সালে স্ট্রোকে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৪৫,৫০২ জন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫,৩৬০ জনে, প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার ঘাটতি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তক্ষরণ বা রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হলে স্ট্রোক হয়, যা প্যারালাইসিস বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

গ্রামের মানুষ শহরের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে আছেন। একজন নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ জানান, ৫৩ শতাংশ গ্রামবাসী স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ এবং অন্যদের ৩৬ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। ৩২ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মানুষও বিপুল ঝুঁকিতে আছেন।

পুরুষদের স্ট্রোকের ঝুঁকি নারীর তুলনায় দ্বিগুণ। নারী প্রতি হাজারে ৮ জন, আর পুরুষ প্রতি হাজারে ১৪ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি থাকলেও শিশু ও কমবয়সী প্রাপ্তবয়স্করাও স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন। দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অঞ্চলে ঝুঁকি বাড়ছে। ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় সাতগুণ বেশি।

চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, কমবয়সী রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি স্ট্রোক রোগীর ২২ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের কম। ত্রিশের কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। কমবয়সীরা আক্রান্ত হলে পক্ষাঘাত বা মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। স্ট্রোক প্রতিরোধে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

ময়মনসিংহ বিভাগে স্ট্রোকের রোগী বেশি। প্রতি হাজারে ১৪.৭১ জন আক্রান্ত, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাজশাহী বিভাগের ক্ষেত্রে সংখ্যা সর্বনিম্ন, ৭.৬২ জন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ২০-২৫ জন স্ট্রোক রোগী ভর্তি হন, মাসে ৬০০ এর বেশি রোগী চিকিৎসা পান। অধ্যাপক ডা. মানবেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, দারিদ্র্য এবং কম শিক্ষার হার এই অঞ্চলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

ঢাকার বাইরে কোনো জেলায় স্ট্রোকের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নেই। ফলে রোগীরা সিঁড়ি ও বারান্দায় মানবেতর জীবন যাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকার চিকিৎসকরা জানান, আক্রান্ত রোগীর ৪৮ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত চর্বি ও মানসিক চাপও স্ট্রোকের ঝুঁকিতে বাড়তি অবদান রাখে।

স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোকের ফলে প্যারালাইসিস হতে পারে; ব্রেইনের যে অংশে স্ট্রোক হয়, তার বিপরীত দিকের হাত-পা প্যারালাইজ হয়ে যায়।

থ্রম্বোলাইসিস পদ্ধতিতে জমাট বাঁধা রক্ত দ্রবীভূত করা হয় এবং মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করা হয়। যত দ্রুত থ্রম্বোলাইসিস করা যায়, রোগীর পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস

আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস

ইনজামামুল হক পার্থ: আজ ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এই দিনটি বিশ্বব্যাপী স্ট্রোক প্রতিরোধ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা... বিস্তারিত