ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

আজ মহান বিজয় দিবস: লাল-সবুজের ৫৫ বছর

২০২৫ ডিসেম্বর ১৬ ০৭:০৫:০১

আজ মহান বিজয় দিবস: লাল-সবুজের ৫৫ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১৬ ডিসেম্বর—মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতিতে বাঙালি জাতি অর্জন করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং উড্ডীন হয় লাল-সবুজের পতাকা।

এবারের বিজয় দিবস উদযাপন হচ্ছে এক ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা এসেছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ এগিয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশা থেকেই এবারের বিজয় দিবস ঘিরে জাতির মনে রয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাণীতে তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে জাতি পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে জাতীয় পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি।

আজ সরকারি ছুটি। ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। রাজধানীসহ সারাদেশের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা, ব্যানার ও রঙিন ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে।

সূর্যোদয়ের পর সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজমের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর কূটনৈতিক প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বেলা ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পৃথক ফ্লাই পাস্ট অনুষ্ঠিত হবে। একই সময়ে বিশেষ ব্যান্ডশো পরিবেশিত হবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার জাতীয় পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন, যা বিশ্বে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং হিসেবে গিনেস বুকে স্থান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও বিএনসিসির বাদক দল বাদ্য পরিবেশন করবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিকেল ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে। একই সময়ে দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। এর আগে সোমবার বিকেলে সেখানে অ্যাক্রোবেটিক শো এবং সন্ধ্যায় ‘জেনারেল ওসমানী’ যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।

বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেবেন। পাশাপাশি মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনার আয়োজন থাকবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, প্রতিবন্ধী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদদের আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো আজ বিনা টিকিটে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সিনেমা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন নৌঘাটে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ। জামায়াতে ইসলামী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব ম্যারাথনের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া এনসিপি, গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট, বাম জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

জাতীয় এর অন্যান্য সংবাদ