ঢাকা, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

রাশিয়ার পথে মৃত্যুযাত্রা! জীবনের দামে চাকরির স্বপ্ন

২০২৫ অক্টোবর ২৭ ১১:৪৭:৫৩

রাশিয়ার পথে মৃত্যুযাত্রা! জীবনের দামে চাকরির স্বপ্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকলেও থামছে না রাশিয়াগামী বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো। বিপজ্জনক পরিস্থিতি জেনেও নানা প্রলোভনে প্রতিদিনই নতুন নতুন তরুণ রাশিয়ার পথে পা বাড়াচ্ছেন। এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে কিছু অবৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট, যারা দুবাই, সৌদি আরব ও তুরস্কের মাধ্যমে কর্মীদের রাশিয়ায় পাঠাচ্ছে। সেখানেই ১৫ দিনের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শেষে অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে যোগ দিতে। গত কয়েক মাসে অন্তত ছয়জন বাংলাদেশি রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না এ মৃত্যুযাত্রা।

গত এক বছরে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি রাশিয়ায় গেছেন, যার ৮০ শতাংশই গেছেন ‘ফেন্ডস অ্যান্ড কো-অপারেশন (এফসি) রিক্রুটমেন্ট’-এর মাধ্যমে। উত্তরা দিয়াবাড়িতে প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১২০ জন কর্মীকে নির্মাণকাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা রাখা হয়েছে ২৩ থেকে ৩৮ বছর। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিজনের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ, ভিসা, টিকিটসহ মোট ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা নিচ্ছে। তারা দাবি করছে, চীনের কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে, যারা কর্মীদের মান যাচাই করে সরাসরি নিয়োগ দেয়।

তবে রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর অনেক শ্রমিককে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এফসি রিক্রুটমেন্টের কর্মকর্তা মো. হাসান বলেন, “অনেক ভুয়া কোম্পানি শ্রমিকদের প্রতারণার মাধ্যমে রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে যুদ্ধের কাজে পাঠায়। আমাদের মাধ্যমে যাওয়া চারজন কর্মী পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন, যার একজন নিহত হয়েছেন।” তিনি জানান, এখন তারা কর্মীদের সঙ্গে লিখিত ও ভিডিও চুক্তি করছেন যেন তারা যুদ্ধে না যায়।

কিন্তু তদন্তে জানা গেছে, এফসি রিক্রুটমেন্টের কোনো সরকারি অনুমোদনই নেই। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তালিকায় এ প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। এমনকি তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও অনুমোদনবিহীন। তারা অন্য বৈধ এজেন্সির নামে লোক পাঠায়। অথচ গত এক বছরে এ প্রতিষ্ঠানই দাবি করছে রাশিয়াগামী শ্রমিকদের সিংহভাগ তাদের মাধ্যমে গেছে।

রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে মারা গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আকরাম হোসেন, ময়মনসিংহের ইয়াসিন মিয়া শেখ, নাটোরের হুমায়ুন কবীর ও রাজবাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নজরুল ইসলামসহ অন্তত ছয়জন। আকরামের বাবা জানান, ৯ লাখ টাকা খরচ করে তাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। পরে সেখানে সেনাবাহিনীতে ‘চুক্তিবদ্ধ যোদ্ধা’ হিসেবে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়, এবং ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় আকরাম নিহত হন।

অপরদিকে, সিআইডির তথ্যমতে, মস্কোতে সেলসম্যান, গার্ড বা রেস্টুরেন্ট কর্মীর চাকরির প্রলোভনে তরুণদের রাশিয়ায় নেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় নাগরিকত্ব ও পরিবারের সদস্যদের রাশিয়া নিয়ে যাওয়ার সুযোগের। কিন্তু মস্কো পৌঁছানোর পর তাদের পাঠানো হয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে, যেখানে যুদ্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবে রাজি না হলে ফেরার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান বলেন, “এটি এক ধরনের আধুনিক মানবপাচার। টাকার লোভে পড়েই তরুণরা এই ফাঁদে পা দিচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে রাশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে, যাতে কেউ এমন বিপজ্জনক প্রলোভনে না পড়ে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (২৭ অক্টোবর)

আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (২৭ অক্টোবর)

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও লেনদেনের সুবিধার জন্য সোমবার... বিস্তারিত