ঢাকা, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করা না গেলেও কমানো সম্ভব: দুদক চেয়ারম্যান

২০২৫ অক্টোবর ২৬ ২০:১৫:৪৪

দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করা না গেলেও কমানো সম্ভব: দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন মনে করেন, চাইলেই দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করা না গেলেও কমানো সম্ভব।

রোববার (২৬ অক্টোবর) যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের ১৮৭তম গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর সংস্থায় সেবার মান বৃদ্ধি এবং সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি রোধের লক্ষ্যে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

দুদক চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, গণশুনানিতে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে দুটি ভাগ আছে: সেবাদাতা এবং সেবাগ্রহীতা। সেবাদাতারা মূলত সরকারি অর্থে লালিত-পালিত, আর সেবাগ্রহীতারা কষ্ট করে জীবন ধারণ করেন এবং তাদের কষ্টার্জিত অর্থের কিছু অংশ কর হিসেবে সরকার নিয়ে নেয়, যা দিয়ে সেবাদাতাদের বেতন হয়।

তিনি বলেন, "দুর্নীতি দমন কমিশন বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি একেবারে শেষ করে দিতে পারবে-নির্মূল করতে পারবে; আমি যদি এখনই প্রত্যাশা করি, এটা একটু বেশি প্রত্যাশা করা হবে। তবে এটা তো স্বীকার করতে হবে যে চাইলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।"

গণশুনানি প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, তারা জনগণকে ও কর্মকর্তাদের মুখোমুখি না করে বরং সম্পৃক্ত করে দিচ্ছেন। এই সম্পৃক্ততার লাভ হলো পরস্পর পরস্পরের কাছে প্রবেশাধিকার পাওয়া। তিনি বলেন, তারা যখন যশোর থেকে চলে যাবেন, তখন যদি দেখেন মানুষের চোখে অশ্রুবিন্দু নেমে এসেছে, তাহলে বুঝবেন জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছিলেন এবং সেবা দিতে পেরেছিলেন। আর যদি হাততালি পড়ে, তাহলে বুঝবেন জনগণ তাকে চায়নি।

সেবাদাতাদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তাদের শুধু এসিআর লিখিত হলে বা রাষ্ট্রকে জবাব দিলেই হবে না, নিজেদের বিবেকের কাছেও জবাবদিহি করতে হবে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "প্রেসম্যানরা হচ্ছে হুইসেলব্লোয়ার।" তিনি জানান, দুদকের ৫০ শতাংশের বেশি মামলা গণমাধ্যমের দেওয়া সংবাদকে ভিত্তি করে তৈরি হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, জঙ্গলের আইন সভ্যতার আইন হতে পারে না। তিনি উল্লেখ করেন, আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কিছু মানুষ তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং কেন হয়েছেন। তিনি আশা করেন, সবাই এটিকে নিজেদের কর্তব্য হিসেবে মেনে নিয়ে এই ফল ত্যাগ করবেন।

তিনি আরও বলেন, "আমরা চেষ্টা করছি যে দুর্নীতি যাতে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। সমাজের সর্বস্তরে দেখা যাচ্ছে যে যারা যতটুকু প্রাপ্য সেখান থেকে তাকে বঞ্চিত করতে পারাটাই যেন বাহাদুরি। আর এমন বাহাদুরি চলতে দেওয়া যায় না।" তিনি সবাইকে কর্মস্থলে দুর্নীতি না করা এবং অন্যের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানান।

মূল্যবান উপহার না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি তারা 'নো গিফট' নামক একটি চর্চার দিকে এগোচ্ছেন। অতিথি আপ্যায়নে আপত্তি নেই, তবে যেখানে স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা আছে, সেখানে সতর্কতা অবলম্বন করে এমন উপহার গ্রহণ করা হবে না, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করে।

গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগগুলো যশোর জেলার সব সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন। গণশুনানিতে মোট ১০৪টি অভিযোগের মধ্যে দুদকের তফসিলভুক্ত ৭৫টি অভিযোগের শুনানি হয়। যার মধ্যে ১০টি অভিযোগ অনুসন্ধানে নেওয়া হয় এবং বাকি অভিযোগগুলো প্রতিবেদন দাখিল সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে।

এর আগে গণশুনানিতে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহব্যাপী মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, বুথ স্থাপন করে অভিযোগ সংগ্রহ, অভিযোগ বাক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুদকের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছিল। গণশুনানিতে সরাসরি সেবাদাতা কর্মকর্তা-কর্মচারী, সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক, স্কাউট-বিএনসিসি উপস্থিত ছিলেন।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত