ঢাকা, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

নবাবদের বংশধররা এখনও পাচ্ছেন ব্রিটিশদের দেওয়া পেনশন

২০২৫ অক্টোবর ২০ ১৩:১৮:৪৯

নবাবদের বংশধররা এখনও পাচ্ছেন ব্রিটিশদের দেওয়া পেনশন

ডুয়া ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের হুসেনাবাদে অবস্থিত পিকচার গ্যালারিতে এক বিশেষ দৃশ্য দেখা গেছে। ৯০ বছর বয়সী ফৈয়াজ আলী খান তাঁর ‘ওয়াসিকা’ বা রাজকীয় পেনশন নিতে এখানে এসেছেন। শহরের ঐতিহাসিক ও রাজকীয় অতীত ধারণ করা এই ভবনের দিকে তিনি দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। বয়সের ভারে তার হাত কাঁপছে, তবে চোখে এখনও এক আলোকিত উজ্জ্বলতা। ফৈয়াজ আলী খান ১,২০০ জন প্রাপকের মধ্যে একজন, যারা আওয়াধ রাজবংশের উত্তরাধিকার সূত্রে এই পেনশন পান।

‘ওয়াসিকা’ ফারসিতে লেখা চুক্তি বোঝায়। এটি মূলত সাবেক অযোধ্যা রাজ্যের নবাবদের বংশধর এবং তাদের সহযোগীদের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছিল। ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত অযোধ্যার নবাবরা এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন। যদিও বর্তমানে ভারতে রাজতন্ত্র নেই, তবুও উত্তরপ্রদেশ, কেরালা ও রাজস্থানের মতো কয়েকটি রাজ্যে নবাব পরিবারের জন্য ওয়াসিকা পেনশন এখনও টিকে আছে।

পেনশনের পরিমাণ খুবই অল্প, তাই ফৈয়াজ আলী বছরে একবারই এটিকে সংগ্রহ করতে আসেন। মাসিক অর্থ মাত্র নয় রুপি ৭০ পয়সা। কিন্তু পরিবার এবং প্রাপকদের কাছে এই অর্থের চেয়ে বেশি মূল্য রাখে সম্মান এবং ঐতিহ্য। ফৈয়াজ আলী খান বলেন, “এটি এক পয়সাও হোক, আমরা খরচ করে এটিকে গ্রহণ করতাম। এটি আমাদের পরিচয়ের প্রতীক।”

বর্তমানে প্রায় ১,২০০ জন ‘ওয়াসিকাদার’ নামে পরিচিত ব্যক্তিরা এই পেনশন পান। ওয়াসিকার পরিমাণ নির্দিষ্ট নয় এবং বংশধরের সংখ্যা বেড়ে গেলে তা ভাগ হয়ে কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ ১০০ রুপি পেলে, মৃত্যুর পর দুই সন্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে প্রত্যেকে ৫০ রুপি পাবেন।

ওয়াসিকা বিতরণের সূচনা হয় ১৮১৭ সালে। অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার স্ত্রী বহু বেগম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দুই কিস্তিতে ৪০ মিলিয়ন রুপি ঋণ দিয়েছিলেন। ঋণের সুদ থেকে আত্মীয় ও সহযোগীরা মাসিক পেনশন পাবেন। এটি চিরস্থায়ী ঋণ হিসেবে ধরা হয়েছিল। পরে আফগান যুদ্ধে আরও কিছু নবাবকে ঋণ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর বহু বেগমের দেওয়া ঋণের একটি অংশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়। ওয়াসিকা কর্মকর্তা এসপি তিওয়ারি জানান, বর্তমানে প্রায় ২৬ লক্ষ রুপির সুদ ব্যাংকে থাকায় এখান থেকেই এই পেনশন দেওয়া হয়।

সমালোচকরা মনে করেন, ওয়াসিকা আধুনিক সমাজে অপ্রাসঙ্গিক। তবে যারা এটি পান, তারা এটিকে ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির প্রতীক হিসেবে দেখেন। তাদের বক্তব্য, “টাকা দিয়ে এর মূল্য মাপা যায় না, এটি আমাদের পরিচয়, কোটি টাকার চেয়ে বেশি দামি।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত এক তোলার (১১.৭ গ্রাম) ওজনের রূপার মুদ্রায় ওয়াসিকা প্রদান করা হতো। ভারতীয় মুদ্রা চালুর পর এর প্রকৃত মূল্য অনেক কমে গেছে।

সময় গড়িয়ে যাওয়ায় ওয়াসিকার প্রাচীন জৌলুস ফিকে হয়ে গেছে। একসময় পেনশন নেওয়া ছিল উৎসবের মতো। ফৈয়াজ আলী জানান, “মানুষরা ঘোড়ার গাড়ি বা টিমটমে চড়ে আসত, মহিলারা পর্দাঘেরা পালকিতে আসতেন। এখন সেই প্রথা আর নেই।” সূত্র: বিবিসি

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত