ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
২৭ দিনের 'রক্তক্ষরণ': ৫১৭ পয়েন্ট হারালো শেয়ারবাজার

আবু তাহের নয়ন
সিনিয়র রিপোর্টার

আবু তাহের নয়ন: দেশের শেয়ারবাজার সাম্প্রতিক সময়ে তীব্র পতনের সম্মুখীন হয়েছে। দীর্ঘ তিন মাসের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কাটিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বাজার আবারো নিম্নমুখী হতে শুরু করে। মাত্র ২৭ কর্মদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১৭ পয়েন্ট হারিয়েছে। সূচকের এই বড় পতনের পাশাপাশি বাজারে লেনদেনের পরিমাণও আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় চিড় ধরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এক হাজার পয়েন্ট বৃদ্ধির পর ৫১৭ পয়েন্টের পতন
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের জুন মাস থেকে শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা পরিস্থিতি কাটতে শুরু করেছিল। গত ২৮ মে ডিএসইএক্স সূচক এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে নেমে আসে। সেই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সূচকটি গত ৭ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ৬৩৬ পয়েন্টে উন্নীত হয়। অর্থাৎ, এই সময়ে সূচকে যুক্ত হয়েছিল মোট ১ হাজার ২১ পয়েন্ট। কিন্তু সেই ইতিবাচক ধারা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ২৭ কর্মদিবসে ডিএসইএক্স সূচক ৫১৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ১১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই দ্রুত পতন প্রমাণ করে যে, বাজারের ওপর বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
লেনদেনের ভয়াবহ হ্রাস ও খাতভিত্তিক নিম্নমুখিতা
সূচকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারবাজারে লেনদেনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যেখানে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, সেখানে গত সপ্তাহ শেষে তা অর্ধেকেরও বেশি কমে মাত্র ৫২২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এটি বাজারের তারল্য সংকটের তীব্রতা তুলে ধরে।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ছয় সপ্তাহে বাজার মূলধনের দিক থেকে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ও লেনদেন প্রধানত নিম্নমুখী ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হলো: ব্যাংক, ওষুধ ও রসায়ন, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, প্রকৌশল এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক। এই বড় মূলধনী খাতগুলোর শেয়ারের ক্রমাগত দরপতনই সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ব্যাংক মার্জারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক
বাজার বিশ্লেষকরা এই তীব্র পতনের পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণকে দায়ী করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় শেয়ারবাজারের সূচকে ইতিবাচক প্রভাব দেখা গিয়েছিল। তবে, সরকার কর্তৃক শরিয়াহভিত্তিক দুর্বল ৫টি ব্যাংককে মার্জার বা একীভূত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, মূলত সেটির কারণেই ব্যাংক খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে বড় ধরনের ভাটা পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় এই পাঁচটি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কীভাবে সংরক্ষিত হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা না থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি দুর্বল আরও ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগটিও বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা বহুগুণে বাড়িয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোকসানের দায় শেষ পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডার হিসেবে তাদেরকেই বহন করতে হবে। এই ধারণার ফলে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মিলিত শঙ্কা ও আস্থার অভাবই সামগ্রিকভাবে শেয়ারবাজারে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এএসএম/
শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- ৪০ বছরের ইতিহাসে ডিভিডেন্ডে নজির ভাঙল এপেক্স ট্যানারি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণায় রেকর্ড ভাঙ্গল লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স!
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে মুন্নু এগ্রো
- একদিনে 'এ' ক্যাটাগরিতে ফিরল দুই কোম্পানি
- বস্ত্র খাতের ৮ কোম্পানিতে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
- মার্জিন ঋণ আতঙ্কে হঠাৎ ধস নামলো শেয়ারবাজারে!
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানি
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ১৭ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি
- ১৪ অক্টোবর: এক নজরে শেয়ারবাজারের ২০ খবর
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে বিএসআরএম লিমিটেড
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ৮ কোম্পানি
- ১০ কোম্পানির কারণে ৩ মাস পেছনে গেল শেয়ারবাজার
- শেয়ারবাজার কি ধ্বংসের পথে? আর কত রক্তক্ষরণ?