ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২
নিরাপদ খাদ্যের জন্য লড়াই: ভেজাল ও লোভের জালে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রাসঙ্গিকতায় বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্যের চ্যালেঞ্জ আবারও সামনে এসেছে। সক্রেটিসের বিখ্যাত উক্তি—“যার টাকা নেই, তার কাছে আইন মাকড়সার জালের মতো; যা শক্তিশালীরা ছিঁড়ে বেরোতে পারে, কিন্তু দুর্বলরা আটকে যায়”—এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাবারের সঙ্গে ক্ষতিকর নিম্নমানের উপাদান মিশিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনে ব্যস্ত। এই অনিরাপদ খাদ্য মানুষের রোগব্যাধি ও মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলেও আইন প্রয়োগে কার্যকরতা সীমিত, ফলে সাধারণ জনগণ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারছে না।
আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হবে। এবারের প্রতিপাদ্য—‘হাত রেখে হাতে, উত্তম খাদ্য ও উন্নত আগামীর পথে’। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে (খামারবাড়ি, ঢাকা) অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে ১৫০টি, মামলা করা হয়েছে ১৫৩টি এবং ১৫০ ব্যক্তিকে দণ্ডিত করা হয়েছে। তবে এই মামলার অনেকটাই নিষ্পত্তি হয়নি, এখনও ১৮৭টি মামলা পেন্ডিং রয়েছে। জেলা ও উপজেলায় প্রায় ১৫,৯৬৯টি মনিটরিং কার্যক্রম ও ৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
নিরাপদ খাদ্য আইনের ধারা অনুযায়ী ভেজাল খাদ্য বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন অনুযায়ী কারাদণ্ড ও জরিমানা, পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে ২০ লাখ টাকার জরিমানা আরোপ করা সম্ভব। তবে আইন বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা ও মামলার জটিলতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রায়শই দণ্ড এড়াতে সক্ষম। মোবাইল কোর্টের জরিমানা তাত্ক্ষণিক হলেও এটি স্থায়ী ও কঠোর শাস্তির বিকল্প নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি মুনাফার লোভে খাদ্যে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ যেমন ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ডিডিটি, কাপড়ের রং ইত্যাদি মিশিয়ে খাদ্যকে অস্বাস্থ্যকর করা হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ উচ্চরক্তচাপ, অসংক্রামক রোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে। আইন প্রয়োগ ছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে হবে, যেন খাদ্য কেনার আগে তারা জানে কোন খাবারে কী উপাদান আছে।
এ প্রসঙ্গে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোগ্রাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা সকলেই জানান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা ছাড়া এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আইন, শাস্তি ও জনসচেতনতার সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া নিরাপদ খাদ্যের বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আইন কার্যকর করা, মানুষকে সচেতন করা এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় লেবেল ও উপাদানের তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র জরিমানা বা মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের আটকানো কঠিন। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রণয়ন ছাড়া অসম্ভব।
ডুয়া/নয়ন
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- ৪০ বছরের ইতিহাসে ডিভিডেন্ডে নজির ভাঙল এপেক্স ট্যানারি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণায় রেকর্ড ভাঙ্গল লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স!
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে মুন্নু এগ্রো
- একদিনে 'এ' ক্যাটাগরিতে ফিরল দুই কোম্পানি
- বস্ত্র খাতের ৮ কোম্পানিতে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
- মার্জিন ঋণ আতঙ্কে হঠাৎ ধস নামলো শেয়ারবাজারে!
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানি
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ১৭ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি
- ১৪ অক্টোবর: এক নজরে শেয়ারবাজারের ২০ খবর
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ৮ কোম্পানি
- ১০ কোম্পানির কারণে ৩ মাস পেছনে গেল শেয়ারবাজার
- শেয়ারবাজার কি ধ্বংসের পথে? আর কত রক্তক্ষরণ?
- পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: নোমান আলীর শিকার মার্করাম